বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমিক্ষা অনুযায়ী বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মেঘনার পানি। ভাঙনে অতিষ্ট মেঘনাকুলবাসী দিশেহারা সম্বলহীন অসহায় হিজলার মানুষ। মেঘনায় স্রোত ও পনি বৃদ্ধির কারণে উপজেলা বিভিন্ন অঞ্চল বেপরোয়া ভাবে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। মেঘনা পাড়ের বসতি রক্ষায় সরকারি বরাদ্দকে মাছের আহার বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলেন বরাদ্দ যা আসছে মেঘনায় ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভাঙন রোধে কোন উপকারে আসছে না।
জানা গেছে, উপজেলা সদর, বাউশিয়া, বাহেরচর, পুরাতন হিজলা, দুর্গাপুর, হরিনাথপুর, হিজলা-গৌরব্দী ধুলখোলাসহ এলাকার বিভিন্ন এলকা এখন বিক্ষিপ্ত ভাঙনে, মেঘনার গর্ভে তলিয়ে গেছে শত শত বাড়ি,ঘড়, স্কুল। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে সমগ্র হিজলার চরাঞ্চল। র্দুযোগ, র্দুভোগ, নদী ভাঙন হিজলার মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। প্রমত্তা মেঘনা যেন হিজলা উপজেলার দুঃখ। নদী ভাঙন হিজলাবাসীর পরম আত্মীয়। বছর বছর বান বন্যার পানি, নদী ভাঙন এ যেন হিজলাবাসীর পরম পাওয়া। মেঘনার ভাঙন হিজলাবাসীর পিছু ছাড়ছে না।
এ ব্যাপারে বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পন্ডিত শাহাবুদ্দিন বলেন, বড়জালিয়ার ৮টি গ্রাম, মেঘনা পাড়ে। আস্তে আস্তে সব ভাঙনে ক্ষুধার্ত মেঘনার পেটে চলে যাচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসাবে আমি ভাঙনের কাছে আমার জনগণের মতো আমিও অসহায়, চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ৬ কিলোমিটার ভাঙছে হিজলার বাউশিয়ার মেঘনা নদী। একমাত্র বাউশিয়া গ্রাম রাক্ষুসী মেঘনা চোখের সামনে গিলছে। মাত্র ২দিনেই বাউশিয়া গ্রামের শতাধিক বসত ঘর মেঘনা গিলে ফেলেছে। কয়েকটা দিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জোন প্রধান হারুন অর রশিদ পরিদর্শন করে গেছেন। সেই স্থান এখন মেঘনার পেটে। ২০০ মিটার দূরে উপজেলা পরিষদ প্রশাসনিক ভবন। স্থানীয় এমপি পংকজ নাথের সহায়তায় বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে হিজলা উপজেলা রক্ষার্থে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। সে টাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এমপি পংকজ নাথ নিজ হাতে জিও ব্যাগ ফেলে কাজের সুচনা করলেও সে ব্যাগ মেঘনা গিলে ফেলছে। সামনে আরও বর্ষা রয়েছে, উপজেলার অবস্থা কোথায় দাঁড়ায় তা বলা মুশকিল।
হরিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আ. লতিফ শিকদার জানান, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, নরিয়া জেলার সব পানি মেঘনা হয়ে বঙ্গোপসগরে ঢোকে হিজলার মূল ভূখন্ড দিয়ে। প্রবল পনির তোড়ে ভেসে গেছে তার ইউনিয়ন। ৫২ ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি “ বদরটুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়” হরিনাথপুর বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ পাকা স্থাপনা ভবন যেকোন মুহূর্তে মেঘনার ভাঙনে তলিয়ে যেতে পারে শুধু সময়ের ব্যাপার।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড এর হিজলায় কর্মরত গেজ মাস্টার তৌহিদুল আলম এবং আ. হাদি জানান, বর্তমানে উজান থেকে নেমে আসা পহাড়ি ঢল, জোয়ারের প্রভাবের কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে হিজলা উপজেলার মেঘনার দুটি পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে হিজলা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বাউশিয়ার মেঘনা এবং অপটি হচ্ছে হরিনাথপুর এলাকার আবুপুর অঞ্চল। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে এখানকার ভাঙনের ব্যপকতা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে খাই খাই করছে মেঘনা। পুরো বাউশিয়া এখন শেষ।আছে শুধু হিজলা উপজেলা। যে কোন সময় উপজেলা তলিয়ে যেতে পারে মেঘনার গর্ভে। স্থানীয় মকবুল আলম মাষ্টার, রফিক খান, আলী আকবর শিকদার, বাকের ফকির এর ভাষ্য এতো বড় মেঘনা, সেখানে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকার জিও ব্যাগ। এতে কি হবে। এতো নদীর মাছের আহার।
ভাঙনকবলিত অসহায় পরিবারগুলো বলছেন, ভিটেমাটি নেই। একটি মাত্র রাস্তা আছে বাউশিয়ায়। সেখানে রয়েছে তিনটি সাইক্লোন সেল্টার, একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মাদ্রাসা, সমজিদ। হাজারো পরিবারের গাদাগাদি করে বসবাস। এক সপ্তাহে যে ভাবে মেঘনায় ভাঙছে তাতে করে সরকার আমাদের রক্ষ করতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না। মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে মেঘনার ভাঙনে শতাধিক পরিবার ভিটে ছাড়া হয়েছে। তাদের সরকারি সহায়তা, বা মাথাগোজার ঠাঁই কোন পক্ষ করেননি। হারিয়ে গেছে শত শত একর ফসলি জমি, ঐতিহ্যবাহি শুপারির বাগান, বাড়ি।
এ বিষয়ে হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বকুল চন্দ্র কবিরাজ জানান, এখন পর্যন্ত সরকারি কোন ত্রাণ বা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়নি। হিজলা উপজেলা লাগোয়া পানিউন্নয়ন বোর্ডের ডাম্পিং কাজ পরিদর্শন করছেন কিনা এবং বাউশিয়া ও নদী ভাঙন পরিবারগুলো সরকার থেকে অনুদান পেছেন কিনা এমন প্রশ্নে জানান, এখনাকার ভাঙন খুবই ব্যাপকতা পেয়েছে। স্থান পরিদর্শন করি। সরকারি ত্রাণ আসলেই তাদেরকে তালিকায় আনা হবে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চল জোন প্রধান হারুন অর রশিদ জানান, সরকার থেকে যে পরিমান অর্থ দেয়া হয়েছে তা দিয়েই কাজের সূচনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাউশিয়া সহ হিজলা উপজেলা রক্ষা বাঁধের জন্য ৪ শত ৮০ কোটি টাকার একটি মেঘা প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কিছুটা বাঁধ রক্ষায় লাঘব হতো। আমরা ভাঙন রোধে চেষ্টা করে যাচ্ছি।