ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ে পাটের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ জমির পাটগাছ পানির নিচে থাকায় এবার ফলন ভাল হয়নি পাটের।
অন্যদিকে আকস্মিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্তের ফলে পাটচাষিরা পাট বিক্রি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। সব মিলিয়ে এবার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে কৃষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
শনিবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এমনি চিত্রটি চোখে পড়ে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্ত আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৮১২ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৩২৮ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়নি। এরমধ্যে দেশি জাতে পাট আবাদ হয়েছে ৭০২ হেক্টর ও তোষা জাতের পাট আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ১১০ হেক্টর। আর পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭০ হাজার ২৬৭ বেল মানে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৩৩৫ মন।
সারেজমিনে গিয়ে যানা যায়, গত বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছিল এবং কৃষকরাও পাটের দামও পেয়েছিল ভাল। কিন্ত এ বছর আগাম ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাটের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে পাটগাছ পানির নিচে থাকায় পাটের ফলন খারাপ হয়েছে। গাছগুলো হয়েছে চিকন চিকন, পাঁচ-ছয় ফুটের বেশি বাড়েনি।
বর্তমান বাজারে পাটের দামও কম। অনেক কৃষক বিভিন্ন সংস্থার ঋণ ও সুদে টাকা-পয়সা নিয়ে পাটের আবাদ করেছেন। ফলন ভালো না হওয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে কৃষকেরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। অন্যদিকে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় পাট বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের কৃষক আবু তালেব জানান,এবারে পাটের ফলন অনেক কম হয়েছে। গতবার বিঘা প্রতি ২০মন হতে ১৮ মন পর্যন্ত হয়েছিলো। কিন্তু এবারে ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে ১২ থেকে ১৪মন আসতে পাড়ে। সেই সাথে এবারে পাটের ফলন ও কম হয়েছে।
মোরদেশ আলী নামের আরেক কৃষক জানান, ঘনবৃষ্টির কারনে পাটের ফলন ও ভালো হয়নি। সেই সাথে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমার চরম বিপদে পড়েছি। আমার কি করে খাবো তা নিয়ে অনেক চিন্তিত ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছু কম জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর উপর আগাম ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এবার পাটের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাজারে পাটের দাম ভাল পেলে কৃষকরা তাদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।