ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ের হাটগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান কোরবানীর পশু থাকলেও ক্রেতা শুন্য। যার ফলে পশুর বিক্রি ও সঠিক দাম নিয়ে সঙ্কায় পড়েছেন কৃষক, খামারি ও ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার জেলার বিভিন্ন হাটে গেলে ঠিক এমনি চিত্রটি চোখে পড়ে।
এবারে জেলার ১৬টি স্থায়ী ও পাঁচটি অস্থায়ী হাটে বিপুল সংখ্যক গরুর আমদানি লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশি গরুর পাশাপাশি খামারের গরুতে ভরে গেছে এসব হাট। তবে করোনার কারণে এবার দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেপারির আগমন না ঘটায় পশু বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। অন্যদিকে জেলায় গরুর ভাইরাসজনিত চর্মরোগ আসায় কমে গেছে গরুর দাম। বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
অথচ অন্যান্য বছর এ সময় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেপারিরা ঠাকুরগাঁওয়ে এসে হাটগুলো থেকে পশু ক্রয় করে নিয়ে যেত। কিন্তু এবার হাটগুলোতে বেপারিদের আনাগোনা নেই।
এদিকে হাটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা স্বাস্থ্যবিধি কোনটাই মানা হচ্ছেনা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে এমন চিত্র চোখেই পড়েনি। এদিকে হাটগুলোতে বাড়ানো হয়েছে প্রশাসনের নজরদারি। জাল টাকা পরীক্ষার জন্য হাটগুলোতে বসানো হয়েছে মেশিন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গরু বিক্রেতা আলতাফ হোসেন জানান, স্থানীয়ভাবে কিছু পশু বিক্রি হলেও তার দাম একদমি কম। গত বছরে যে গরু বিক্রি হতো ৪০-৪৫ হাজার টাকায়। সে গরু এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ হাজার টাকায়। এই ঈদে পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গরু বিক্রেতা আবু তালেব জানান,গতবারের এই সময়ে গরু কেনার একটা হিরিক ছিলো। কিন্তু আর কয়েকদিন পর ঈদ হলেও ক্রেতাদের তেমন কোন চাহিদা নেই। এবার হাটগুলোতে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড়-দুই লাখ টাকা দামের গরু উঠেছে। বাইরের বেপারী নেই এবং স্থানীয় ক্রেতার সংখ্যাও কম। ভালো দাম না বলায় গরু ঘুড়ায় নিয়ে যাচ্ছি বাসায়।
গরু কিনতে আসা ক্রেতা আরমান হোসেন জানান, একতো করোনার ফলে আয় রোজগার কমে গেছে অপরদিকে পশুর হাটে যে হারে গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে তাতে আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা অনেক বিপদে পড়েছি।
খোঁচাবাড়ি হাটে গরু কিনতে আসা ফয়সাল আলী জানান, হাটে গরুর দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। প্রায় ২ঘন্টা ধরে হাটে ঘুড়তেছি। বিক্রেতারা যে হারে গরুর দাম চাচ্ছে তা আমাদের কাছে অনেক বেশি। সব মিলে ৫৫ হাজার দিয়ে মাঝারি আকারের একটি গরু নিতে হলো। গরুর দাম শুনার পরে অনেক বিক্রেতাই গরু নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, জেলায় ১০ হাজার ৩৩১টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে গরু রয়েছে ছয় লাখ ৪৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। আর মারা গেছে প্রায় অর্ধশত গরু।
তিনি বলেন, বাজারগুলোয় তাদের চিকিৎসক রয়েছেন। তারা লাম্পি রোগে আক্রান্ত গরু বাজারে তুললে তা ফেরত পাঠাচ্ছেন। তবে লাম্পি আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে মানবদেহের কোনো ক্ষতি হয় না।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান মনির বলেন, প্রত্যেকটি হাটে পুলিশি নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। সেই সাথে জাল টাকা শনাক্তের জন্য হাটগুলোতে মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। আশা করি ভাল করে হাটগুলো শেষ হবে।