লিচুর রাজ্য নামে পরিচিত দিনাজপুর জেলাসহ খানসামা উপজেলা। পাশাপাশি আমের জন্যও বিখ্যাত এই উপজেলা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলায় এবার লিচু ও আমের ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন, বাগান মালিকরা। করোনা মহামারিতে গত দুই বছরের ক্ষতি এবার পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন বুনছেন এ উপজেলার বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। রসালো ফল লিচুর মুকুলে ভরে উঠছে গাছগুলো। জানান দিচ্ছে লিচুর আগমনী বার্তা। গাছে গাছে মুকুলের সোমারহে বুক ভরা স্বপ্নে বিভোর লিচু চাষিরা। গেল বারের মত এবারও বাম্পার ফলনের আশাবাদ লিচু চাষীদের। লিচু বাগানে গাছে গাছে মুকুল দেখে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে চাষিদের মন। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় এবার সব লিচুর গাছেই ধরেছে মুকুল।
ঋতুরাজ বসন্তে খানসামার আম ও লিচু বাগানগুলোতে সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে মুকুলগুলো। যেমন সৌন্দর্য, তেমন তার ঘ্রাণ।
সারাদেশ থেকে অনেকেই টসটসে রসালো লিচুর স্বাদ নিতে দিনাজপুরে খানসামায় আসেন। ভুট্টা ও পপকনপর এখানকার লিচুর রয়েছে দেশব্যাপী খ্যাতি। ইতোমধ্যে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গাছের নিয়মিত চর্চা করছেন। তারা আশা করছেন, এবার আম-লিচুর বাম্পার ফলন হবে।
উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে আম ও লিচু বাগান ছাড়াও অনেকে বাসা-বাড়িতে চাষ করেছেন। তাদের রোপণ করা বেশিরভাগ বাগানেই ফুটেছে মুকুল।
উপজেলার খামারপাড়া এলাকার লিচু বাগান মালিক ইসমাইল হোসেনের হাজী জানান, বেশিরভাগ গাছে লিচু মুকুল ধরায় বাম্পার ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবার।
উপজেলার কাচিনীয়া গ্রামের জাকারিয়া বলেন, এমন কোনো বাড়ি নেই যে, যাদের বাড়িতে আমগাছ নেই। তাই প্রতিটি বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে আমের মুকুল। এসব মুকুলে সুবাস যেন মুগ্ধ করে তুলেছে মানুষকে।
এ ছাড়া লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লিচু গাছগুলোয় গতবারের চেয়ে এবার মুকুল ধরেছে বেশ ভালো। এখন শুধু প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা আর কৃষি অফিসের সহযোগিতা। তাহলে গাছের মুকুল ধরে রাখতে পারলে ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃৃষিবিদ বাসুদেব রায় বলেন, এবার একটু আগেই লিচু ও আমগাছে মুকুল এসেছে। উপজেলার ১৪০.৮৫ হেক্টর জমিতে ৩৮১ লিচুর বাগান রয়েছে এবং ২৮ হেক্টর জমিতে ৭০ টি আম বাগানে মুকুল এসেছে। তবে আবহাওয়া বিরূপ না হলে যে হারে গাছে মুকুল ধরেছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন, উন্নত মানের লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে এই জেলায়। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে চায়না টু, চায়না থ্রি ,বোম্বাই ,মাদ্রাজি, কাঠালি, হাড়িয়া, এলাচি, বারি টু বালি থ্রি এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় বেদনা জাতের লিচু। বর্তমানে চাষীরা ব্যস্ত রয়েছে বাগান পরিচর্যা। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত লিচু চাষীদের উন্নত জাতের লিচু উৎপাদনে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সেই সাথে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছি। জৈব রাসায়নিক পদ্ধতিতে নিচু উৎপাদনের জন্য কৃষিবিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।