ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মেঘনা নদীতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ইজারার শর্ত ভেঙে অবৈধভাবে দিনে ও রাতে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। গত শনিবার বিকেলে উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের চরমানিকনগর মেঘনা নদীর তীরে কয়েক শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় সাবেক ইউপি সদস্য সামসু মিয়া, হোসেন মিয়া, ওসমান মিয়া, জলিল মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, আউয়াল মিয়া, আক্তার ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান, কাওসার মিয়াসহ আরও অনেকেই বক্তব্য রাখেন। চরমানিকনগর গ্রামের উসমান মিয়া বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় দিবালোকে অস্ত্রের মহড়ায় নির্বিঘ্নে সীমানা অতিক্রম করে আমাদের দাগের জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইজারাদাররা। প্রতিবাদ করলে ধরে নিয়ে মারধর করে। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতেও সাহস করে না। এভাবে অবৈধ বালু উত্তোলন চলতে থাকলে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসতে হবে আমাদের। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়ে আশিক মিয়া, শাহজালাল, জলিল মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, সবুজ মিয়াসহ একাধিক ভুক্তভোগী জমির মালিক বলেন, ইজারার শর্ত ভেঙে সীমানা অতিক্রম করে দিনে ও রাতে অতিরিক্ত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পরেছে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধসহ ফসলি জমি, কবরস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজারসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম। উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষায় ২০১৮ সালে সোনাবালুয়া ঘাট থেকে এমপি টিলা পর্যন্ত ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। ইজারার শর্ত ভেঙে বেড়িবাঁধের কাছে গিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বেড়িবাঁধের ৪০ মিটার এলাকা জুড়ে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এজন্য প্রশাসনের উদাসীনতায় দায়ী। এভাবে চলতে থাকলে নবীনগর উপজেলার মানচিত্র থেকে নদীর তীরবর্তী, বীরগাও, দুর্গারামপুর, চিত্রি, দড়িলাপাং, চরলাপাং, সাহেবনগর, নাছিরাবাদ, মানিকনগর, চরমানিকনগর, বড়িকান্দি, সোনাবালুয়া ও ধরাভাংগাসহ পার্গ-পার্শ্ববর্তী আরও কিছু গ্রাম চিরতরে মুছে যাবে। এছাড়াও তারা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান পরিদর্শন শেষে বেড়িবাঁধের ৪০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৫ ধারা এর ১,২,৩ উপধারা লঙ্ঘন করায় জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত চিঠি দিলেও প্রশাসন থেকে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাজিব চৌধুরী বলেন, তিনি সম্প্রতি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং বালু উত্তোলন সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে সমঝোতার চেষ্টা করবেন।