নিউ ইয়র্কে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কনসার্ট ও রোড শো আয়োজন নিয়ে অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। সিলিকন ভ্যালিসহ চারটি স্থানে রোড শোর সিদ্ধান্ত হলেও নিউ ইয়র্ক ছাড়া হয়নি অন্য কোথাও। শর্ত লঙ্ঘন করে কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদারকে চুক্তির পুরো অর্থই অগ্রিম দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রকল্পের টাকায় যুক্তরাষ্ট্রে যান মন্ত্রী, এমপি ও আমলাসহ ৫০ জন। আর পরিবার নিয়ে যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকসহ অন্য আমলারাও। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি হাইটেক পার্কের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকর্ণ কুমার ঘোষ। সম্প্রতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কনসার্ট ও রোড শো আয়োজন নিয়ে অর্থ নয়ছয়ের তথ্য সময় সংবাদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের উদ্যোগে-২০২২ সালের ৬ মে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হয় ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট’ এবং আয়োজন করা হয় রোড শোর। সরকারি আদেশ অনুসারে এ আয়োজনে অংশ নিতে ৭১ জনের বহর যায় নিউ ইর্য়কে। এর মধ্যে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী মোজাম্মেল হক, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিদ এজহার, নুরুল আমিন, অপরাজিতা হক; পলকের পিএস সাইফুল ইসলাম, পিএ সাদ্দাম, পিও রাকিবুল, একরামুলসহ ৫০ জন আমলা। তাদের সব ব্যয় বহন করা হয় আইসিটি বিভাগ, হাইটেক পার্ক এবং সংস্থাগুলোর অধীন ৭ প্রকল্প থেকে। সর্বনিম্ন ছয় থেকে সর্বোচ্চ ১৪ দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন তারা। প্রকল্পের অর্থে ভ্রমণ বিলাস কেন? তার উত্তর দেননি হাইটেক পার্কের তৎকালীন এমডি বিকর্ণ কুমার ঘোষ। শুধু তাই নয়; নিজ খরচে নিউ ইয়র্কে স্ত্রী কনিকা, তিন ছেলে, মা জামিলা আহমেদ, বোন ফারজানা আহমেদকে নিয়ে যান তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে যান পলকের পিএস সাইফুল ইসলাম; হাইটেক পার্কের এমডিসহ কয়েকজন প্রকল্প পরিচালক। এখানেই শেষ নয় কনসার্ট এবং রোড শো করতে ৩৪ কোটি ১২ লাখ টাকায় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান মেইনস্প্রিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে আইসিটি বিভাগ দেয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। হাইটেক পার্ক সূত্রে জানা গেছে, এ অনুষ্ঠানের খরচ জোগাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চাঁদা নেওয়া হয়। ওয়ালটন, সিটি ব্যাংকসহ ১০ প্রতিষ্ঠান দিয়েছে ১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, ‘সেই সময় যৌক্তিক বলেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন দিয়েছে। এখন একই জিনিস, কেউ হয়ত দেখবে পজেটিভ আবার কেউ হয়ত দেখতে পারে নেগেটিভ।’ অনুসন্ধানে দেখা যায়, মেইনস্প্রিং লিমিটেড নিজেরা না করে কাজটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পারাসা এন্টারটেইনমেন্টের কাছে হস্তান্তর করে। চুক্তির শর্তানুযায়ী ব্যাংক গ্যারান্টি পেলে মেইনস্প্রিংকে চুক্তিমূল্যের ৫০ শতাংশ অর্থ অগ্রিম দেওয়া যাবে। তবে নথিপত্রে দেখা যায়, দু’দফায় মেইনস্প্রিংকে অগ্রিম দেওয়া হয়েছে ৪০ লাখ ৪৮ হাজার ২৫১ ডলার বা পুরো অর্থ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন ভাড়া ও শিল্পীদের সম্মানীসহ কনসার্ট আয়োজনে সবমিলিয়ে ১১ লাখ ডলার খরচ হতে পারে। নিউ ইয়র্ক, বোস্টন, ওয়াশিংটন ডিসি ও সিলিকন ভ্যালিতে রোড শোর সিদ্ধান্ত হলেও আয়োজনটি হয়েছে শুধু নিউ ইয়র্কে। তাহলে এত অর্থ খরচ হলো কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে মাফ চান বিকর্ণ কুমার ঘোষ। বিকর্ণ কুমার বলেন, ‘চুক্তি তো সরকারের পক্ষে একজন না একজন করবেই। আমাকে যেহেতু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাই সরকারের পক্ষে আমি সই করেছি।’ এদিকে মাফ চেয়ে পার পাওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব। তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনাও সম্ভব। মূলত রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হয়েছে।’ কারাগারে থাকায় এ বিষয়ে কথা বলা যায়নি জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে।