ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পারিবারিক কলহের জেরে অরুণ মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার পর টুকরা করে সেফটি ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছিলেন স্ত্রী। এর চারদিন পর প্রতিবেশীর বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে ওই ব্যক্তির নয় টুকরা লাশ উদ্ধার করেছে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে নিহতের প্রথম স্ত্রীর ছেলে লুৎফুর রহমান রুবেল বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনা বেগম ও তার মেয়ে লাকীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (২ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে মোমেনা ও তার মেয়ে লাকীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদ গ্রামের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা অরুণ মিয়ার প্রথম স্ত্রী মৃত্যুর পর ৩৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন একই গ্রামের মোমেনা বেগমকে। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ২০১৭ সালে অরুণ মিয়ার সঙ্গে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে অরুন মিয়া তার প্রথম স্ত্রীর সস্তান রুবেলের কাছে ঢাকায় চলে যান। এদিকে অরুন মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে দেশে এনে তার লাশ দাফন করা হয়। সন্তান বিদেশ যাওয়ার সময় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেনা ছিল। পরবর্তীতে অরুন মিয়া জমি বিক্রি করে সেই দেনা শোধ করেন। গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে অরুণ মিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। দুই দিন খোঁজাখুঁজির পর গত সোমবার অরুণ মিয়ার প্রথম স্ত্রীর সন্তান লুৎফুর রহমান রুবেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অরুণ মিয়ার প্রতিবেশী সৌদি প্রবাসী মনির মিয়া সেফটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ পায় এলাকাবাসী। তারা ট্যাঙ্কের ভেতোরে পলিথিনে মোড়ানো কিছু দেখতে পেয়ে পুলিশ খবর দেয়। পরে পুলিশ সেখানে পৌঁছে ট্যাংকের পানি সেচে পলিথিনের নয়টি ব্যাগ উদ্ধার করে। পরে সেগুলো অরুণ মিয়ার মরদেহ বলে শণাক্ত করেন তার ছেলে। অরুণ মিয়ার প্রতিবেশী কুদ্দুস মিয়া বলেন, গত শুক্রবার অরুণ মিয়া মসজিদে নামাজ পড়েছেন। তারপর থেকেই তিনি নিখোঁজ। তার বউ আমাদের বলেছেন, শুক্রবার সকালে তিনি ঢাকা গেছেন। তখনই আমাদের মনে সন্দেহ হয়। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমরা মনিরের বাড়ির সেফটিক ট্যাঙ্ক থেকে দুর্গন্ধ পাই। অরুণ মিয়ার প্রথম স্ত্রীর সন্তান লুৎফুর রহমান রুবেল জানান, আমার ছোট মা বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমার আপন মা মারা গেছে ৩৫ বছর আগে। বাবা ২০১৭ সাল থেকে আমার কাছে ছিলেন। কয়েক মাস আগে আমার প্রতিবেশী চাচারা বিষয়টি মিটমাট করে দিলে ছোট মায়ের সঙ্গে বাবা থাকা শুরু করেন। কয়েক দিন যাবত ফোনে বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাচ্ছি না। বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত সুজন কুমার পাল জানান, পারিবারিক কলহের জেরে দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনা অরুণ মিয়ার মাথায় আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। মোমেনা চাপাতি (টাকশাল) দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে নয়টি পলিথিনে বেঁধে প্রতিবেশী প্রবাসী মনির মিয়ার সেফটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেন। আমাদের ধারণা মোমেনা ছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে।