অধিক খাদ্য শস্য উৎপাদনের লক্ষে শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা প্রতি বছরই অর্থকরী ফসল গমের চাষ বেড়েই চলছে। এতে উপজেলায় কৃষি ব্যবস্থায় ঘটছে ব্যাপক পরিবর্তন। অল্প খরচে অধিক লাভজনক আর উন্নতজাতের এবং অর্থকরী ফসল হওয়ায় বোরো চাষের পাশাপাশি গম চাষে ঝুঁকছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। অধিকাংশ কৃষক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প খরচে অধিক লাভজনক উন্নতজাতের খাদ্য শস্য গম চাষ করছেন এমনটাই জানালেন উপজেলা সগুনা ইউনিয়নের বিন্নাবাড়ি গ্রামের কৃষক আলীমুদ্দিন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে গমের বাম্পার ফলন ও অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় এ উপজেলার সচেতন কৃষকরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের গম চাষে ঝুকছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছরও প্রতিটি গম চাষি অর্থিক ভাবে অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে মনে করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গম চাষ মূলত শীত প্রধান দেশের অর্থকরী ফসল হলেও আমাদের দেশে গম আবাদের ইতিহাস খুব বেশি দিন আগের নয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ গম গবেষণা কেন্দ্র দেশে গম আবাদে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও কৃষকদের অবদান এক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কৃষিবিদগণ। কম সেচে অধিক ফসল উৎপাদনসহ রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ কম হওয়ায় গম চাষে উৎপাদন ব্যয় কম। পাশাপাশি ধানের সাথে তুলনামূলক ভাবে গমের দামও ভাল। ফলে কৃষক কম খরচে অধিক আয়ের লক্ষ্যে গম আবাদে ঝুঁকছেন বলে মনে করছেন তাঁরা। এমনকি বোরো ধানের চেয়ে গম চাষে রাসায়নিক সারের ব্যবহারও কম। ফলে কৃষকের কম বিনিয়োগে আয় বেশি। এ অঞ্চলে সাধারনতঃ বারি-৩২ ও ৩৩ জাতের গমে পোকার আক্রমণ কম হওয়ার ফলে ফলন ভালো হয়। তুলনামূলক ভাবে অন্য জাতের গমের চেয়ে এসব জাতের গম চাষে উৎপাদন ব্যয় কম। ফলে কৃষকরা বারি-৩২ ও ৩৩ জাতের গম চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। চরহামকুড়িয়া গ্রামের গম চাষী মাসুম মোল্লা বলেন, বিল এলাকার চেয়ে চর অঞ্চলে গমের ফলন ভাল হয়। তাই এ বছর চড়ে ব্যাপক গম চাষ হয়েছে। গমের বাজার মূল্য ভাল থাকলে কৃষক বেশ লাভবান হবেন। উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার ১ টি পৌর সভা ও ৮ টি ইউনিয়নে এবার ৩১০ হেক্টর জমিতে গম চাষ করেছে কৃষক। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ২২০ হেক্টর জমিতে বারি-৩৩ ও ৯০ হেক্টর জমিতে বারি-৩২ জাতের গম চাষ করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভূগর্ভের পানির স্তর ঠিক রাখতে ধান চাষের পাশাপাশি এ উপজেলার কৃষকদের গম চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কৃষকরা যেন গম চাষে কোন প্রকার সমস্যায় না পরেন সেই জন্য আমরা সর্বাক্ষণিক নজর রাখছি। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যয়ের কর্মকর্তাগণ কৃষকদের পাশে থেকে তাদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশা করেন।