উচ্চ মাধ্যমিক পড়ালেখার পাশাপাশি নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন মো. শবনম খন্দকার বাবু। সবাই যখন চাকুরির চেষ্টায়রত, তখন বাবু কয়েকজন বন্ধু মিলে ক্ষুদ্র আকারে ধান চালের ও ডিজেলের ব্যবসা শুরু করেন। মৌসুমী ফসল ধান, সরিষা, পাট ক্রয় করেও গুদামজাত করতেন। পরে সেগুলোর দাম বৃদ্ধি হলেই করতো বিক্রি। এতে যে পরিমান অর্থ আয় হতো তা দিয়েই চলতো সংসার। সখ থাকলেও সাধ্য ছিল না তখন। ২০০২ সালের কথা। গ্রামে থেকেই কিছু একটা করতে হবে এমন ভাবনা তার মাথায়। তখন তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আধুনিক পদ্ধতিতে সবে মাত্র মাছ চাষ শুরু করছেন বিভিন্ন মৎস্য চাষি। মাছে ভাতে বাঙালি, ফসল নষ্ট হলেও মাছে লোকসান নাই এমন পরামর্শ আসে অভিজ্ঞ মৎস্য চাষিদের কাছ থেকে। আর সে পরামর্শে বাবু মৎস্য চাষকেই করলেন নিজ জীবনের উপজীব্য। প্রাথমিক পর্যায়ে ৯ বিঘার আয়তনের পুকুর লীজ নিয়ে শুরু করেন মৎস্য চাষ। সে সময় তাকে নিয়ে অনেকেই হাসিাঠাট্রা করতেন এই বলে, চাকুরি না করে জেলের জীবন বেছে নিলো বাবু! কিন্তু বাবু এসব পিছু লোকের কথায় কান না দিয়ে, নিজেকে সপে দিলেন মৎস্য চাষে। সেখানে সে নিজেই শ্রমিক নিজেই মালিক। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে মৎস্য চাষের ট্রেনিং নিয়ে, সফল চাষিদের পরামর্শও গ্রহণ করে মোটামুটি অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তা তার নিজের কাজে লাগালেন। দেখতে শুরু করলেন সাফল্যের মুখ। আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাকে। সেই থেকে পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ, তার প্রকল্পে এখন নিয়মিত কাজ করেন শতাধিক শ্রমিক। এসব প্রান্তিক মানুষের কর্ম সংস্থান করায় এলাকায় সে এখন এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে এ গল্প সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মাটিয়ামালিপাড়া গ্রামের মৃত হায়দার আলীর ছেলে মো: শবনম খন্দকার বাবুর জীবনের। ভাগ্য বদলের সংগ্রামে বর্তমানে বাবুর লীজ নেওয়া তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় রয়েছে ৩শ’ বিঘার অধিক পুকুরে মাছের চাষ। যাতে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। মাছ চাষের পাশাপাশি পুকুড় পাড়ে পতিত জমিতে কলাগাছ, মৌসুমী শাক সবজি ও ছাগল পালন করে বাড়তি আয় বর্ধক প্রকল্প হাতে নিয়েও সফলতা পেয়েছেন। তার প্রকল্প দেখতে ও পরামর্শ নিতে অসংখ্য মানুষ প্রায় প্রতিদিন বাবুর কাছে আসেন। তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে পরামর্শ দেন কিভাবে ডিম থেকে রেণু ও পোনা উৎপাদন, মাছের খাদ্য তৈরি এবং একটি মৎস্য প্রকল্প কিভাবে সফলতা পেতে পারে, কি কি প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হয় ইত্যাদি। তার এ উদ্যোগের জন্য ইতোমধ্যে তিনি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা পদক। বাবুর মৎস্য প্রকল্প নিয়ে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ জানান, খোলা পুকুরে নিরাপদে মাছ চাষ করেন শবনম খন্দকার বাবু। আমি প্রায়ই তার পুকুর পরিদর্শন করি। তিনি খুব আন্তরিক ভাবে আমাদের পরামর্শ গ্রহন করেন এবং সেটি বাস্তবায়নও করেন। একজন সফল মৎস্যচাষী হিসাবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বাবু পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা পদক। তার এই মৎস্য চাষে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের, পূর্ণ হচ্ছে দেশের পুষ্টি চাহিদা, বিশেষ ভুমিকা রাখছে জিডিপিতেও। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, জীবন সংগ্রামে লক্ষ্য নিয়ে সততার সাথে কাজ করলে সাফল্য আসবেই। যা শবনম খন্দকার বাবু করেছেন। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে দেশ ও দশের উন্নয়নে প্রান্তিক পর্যায়ে শবনম খন্দকার বাবু’র মতো আরো উদ্যোক্তদের এগিয়ে আসা জরুরী। এ প্রসংগে শবনম খন্দকার বাবু জানান, আজকের এই সফলতার পিছনে রয়েছে আমার সততা ও বিশ্বাস আর মৎস্য কর্মকর্তাদের আন্তরিক সহযোগীতা। মাছ চাষের পাশাপাশি আমার আছে ফিশ ফিডের ডিলারশীপ। এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সাধ্যমত সহযোগীতা করি। মানুষের ভালবাসায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসেছি।