যশোরের মণিরামপুরের পথের পাশে, জমির আইলে, খাল-বিল পাড়ে এবং বাড়ির আনাচেকানাচে নজরে পড়ছে কাঁচা-পাকা হলুদ খেজুর। বলা হয়, বছরে দুই ফলন আসে খেজুর গাছে, শীতকালে মিষ্টি সুস্বাদু রস, আর গরমকালে খেজুর ফল। খেজুর শুষ্ক ও মরু অঞ্চলের উদ্ভিদ হওয়ায় গঙ্গার নিম্ন অববাহিকার খেজুর গাছে যথেষ্ট শাঁসযুক্ত উৎকৃষ্ট মানের খেজুর হয় না। তাই এটি খাদ্য হিসেবে খুব একটা ব্যবহার হয় না। তবে এই গাছের রস আকর্ষণীয় ও সুমিষ্ট। দেশি খেজুরকে কেউ কেউ বুনো বা জংলি খেজুর নামে ডাকেন। কেননা এটা কেউ চাষ করে না, জঙ্গলের গাছ। দেশি খেজুর এ দেশের একটি অন্যতম প্রাচীন ফল। এ দেশেই উৎপত্তি, এ দেশেই বিস্তার। চৈত্র মাসে ফুল ফোটে। কাঁদিতে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটে। পুরুষ ফুল সাদা ক্ষুদ্রাকার। ফল হয় গ্রীষ্মকালে। ফল প্রায় ডিম্বাকৃতি, হলুদ রঙের, লম্বায় প্রায় ২.৫ সেন্টিমিটার। ভেতরে হালকা বাদামি রঙের একটি বীজ থাকে। বীজের ওপরে পাতলা আবরণের মতো শাঁস থাকে। কাঁচা শাঁস কইষট্যা-নোনতা। কিন্তু পাকলে তা বেশ মিষ্টি হয়। পাকা খেজুরের রঙ লালচে বাদামি থেকে খয়েরি হয়। বীজ দিয়েই খেজুরের বংশবৃদ্ধি হয়। দেশি খেজুরকে চিনি বা গুড় উৎপাদনকারী ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খেজুর গাছের প্রধান ব্যবহার রস ও গুড় উৎপাদন করা। তবে এর ফলও খাওয়া যায়। দেশি খেজুুরের ফল খুব নিম্নমানের হওয়ায় তা ফল হিসেবে অনেকেই খায় না। দেশি খেজুরের ফলের শাঁস পাতলা, বিচি বড়, পাকা ফলের সংরক্ষণ ক্ষমতা খুবই কম। তবু পাকা ফলের সুমিষ্ট গন্ধ ও মিষ্টি স্বাদ অনেককেই আকৃষ্ট করে। পাকা খেজুর গ্রাম বাংলার শিশুদের কাছে খুব প্রিয়। সরল গোলাকার কান্ড বিশিষ্ট, শাখা প্রশাখা বিহীন, একবীজ পত্রী উদ্ভিদ খেজুর গাছ। গাছ সাধারণত ৪-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। রসের জন্য প্রতিবছর কাটা হয়ে বলে গাছগুলো বিশেষ আকৃতি ধারণ করে। গাছের মাথা একগুচ্ছ বড় লম্বাটে পাতা দ্বারা সজ্জিত। প্রতিটি পাতার বোঁটার দুই প্রান্তে লম্বা লম্বা কাঁটা থাকে। পাতার অগ্রভাগ সুচালো। ফল সাধারণত বীজ প্রধান। বীজের উপর পাতলা আবরণের মতো শাঁস থাকে। কাঁচা খেজুর ‘কইস্ট্যা’ লাগলেও পাকা খেজুর বেশ মিষ্টি। আমাদের দেশের খেজুর গাছগুলো ‘দেশি খেজুর, খাজুর কিংবা খেজুর’ গাছ নামে পরিচিত। ইংরেজিতে একে ওয়াইল্ড ডেট পাম বা সুগার ডেট পাম বলা হয়। সারা বাংলাদেশেই খেজুর গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তবে ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও নাটোর অঞ্চলে এ গাছের আধিক্য দেখা যায়। দেশে যে খেজুর গাছ দেখতে পাওয়া যায় তার ফল গ্রামীণ জনপদে বেশ জনপ্রিয়। রাজগঞ্জের চালুয়াহাটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম মারুফুল হক জানান, গাছির অভাবে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করা যাচ্ছে না। এ কারণে প্রতি বছর শত শত খেজুর গাছ কেটে ফেলছে। বর্তমানে এ এলাকায় অনেক খেজুর গাছ রয়েছে। যা প্রায় সবই ছোট। বড় গাছের সংখ্যা কম। তবে কয়েক বছর আগেও এ এলাকায় লক্ষাধিক খেজুর গাছ ছিল। রাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে খেজুর গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে খেজুর। অনেক খেজুরে রঙ ধরেছে। তা দেখে প্রতিটি মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। খেজুর পাকতে শুরু করেছে। প্রায় গাছে খেজুর পেকে গেছে। সড়কের পাশে খেজুর গাছের খেজুরগুলো স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা পেড়ে খেতেও শুরু করেছে। অনেকেই পাকা খেজুর বাজারে বিক্রি করছে। বিশ টাকা কেজি দরে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। তবে মৌসুমী ফলের ভিড়ে দেশী খেজুরের কদর খুবই কম বাজারে। খেজুর গাছ দুরারোগ প্রতিরোধী উদ্ভিদ, প্রতিকূল পরিবেশেও এটি টিকে থাকতে পারে। রাস্তার দু’ধারে, পুকুর পাড় কিংবা ক্ষেতের আইলে এ গাছ বেশী দেখা যায়। পাকা খেজুর দোয়েল, বুলবুলি, শালিক পাখিসহ অন্যান্য পাখিদের খুব প্রিয়। পিঁপড়া ও মৌমাছিরাও এ পাকা খেজুরের স্বাদ নিতে দেখা যায়।