নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব সরকার স্থগিত রাখার পর এবার কমিশনের হাতে থাকা মেশিনগুলোর ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর। কেননা, মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অর্থের ওপর নির্ভর করছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারযোগ্য ইভিএমের সংখ্যা নির্ধারণের।
বুধবার (১৫ মার্চ) ১৬-তম কমিশন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
জাহাংগীর আলম বলেন, ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) জানিয়েছে আমাদের এক লাখ দশ হাজার ইভিএম আছে, যেগুলো মেরামত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা সংখ্যাটা চূড়ান্ত করতে পারবো, যে মোট কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে পারবো।
ইসি সচিব বলেন, এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে টাকা দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠাবো। অর্থ মন্ত্রণালয় যদি অর্থ দিতে সম্মতি জানায়, তখন পরবর্তী ধাপে আপনাদের আমরা জানাতে পারবো, যে আসলে আমরা কোন আসনে কতটি নির্বাচনী এলাকার ইভিএম ব্যবহার করতে পারবো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আমরা চিন্তা করছি যতটুকু সম্ভব বেশি ব্যবহার করার জন্য। কারণ আপনারা জানেন ভোটার সংখ্যা একেক জায়গায় একেক রকম। সুতরাং যদি ছোট এলাকায় নেওয়া যায়, তাহলে বেশি ইভিএম ব্যবহার হবে। আর বড় এলাকায় হলে সেখানে কম যাবে। সুতরাং সব চূড়ান্ত করে হাতে রিপোর্ট পাওয়ার পর সুস্পষ্টভাবে বলতে পারবো।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সক্ষমতা হচ্ছে, মাননীয় কমিশন সব সময় বলে আসছেন ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। আমরা সে জায়গা থেকে সরে আসি নাই। কত আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, সে সংখ্যা নির্ভর করবে ব্যবহারযোগ্য ইভিএম মেশিনের ওপর। মেশিন যতগুলো আছে, সেগুলোকে সক্ষম, কতগুলোকে ব্যবহারযোগ্য করতে পারবো তার ওপর নির্ভর করবে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দু’লাখ ইভিএম মেশিন কিনেছিল তৎকালীন কেএম নূরুল হুদা কমিশন। সে সময় জাতীয় নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করেছিলেন তারা। বাকিগুলো বিভিন্ন আসনের উপ-নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়। কিছু মেশিন বিএমটিএফের ওয়্যারহাউজে সংরিক্ষত আছে। সবমিলিয়ে এক লাখ ১০ হাজার মেশিন ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। সেগুলোই এখন মেরামত করার ওপর নির্ভর করবে ব্যবহারযোগ্য মেশিনের সংখ্যা। আর এটি নির্ভর করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অর্থ বরাদ্দের ওপর।
কাজী হাবিবুল আউয়াল গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্বে নেওয়ার পর বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নেয়। এজন্য প্রায় চার লাখ মেশিনের প্রয়োজন পড়ে। এতে আরও দুই লাখ মেশিন কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন আট হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার নতুন একটি প্রস্তাব দেয় সরকারের কাছে। কিন্তু বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানায় পরিকল্পনা কমিশন। এ অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠিক কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, তা এখনো অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে।