মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ নারীদের জন্য তথ্য প্রাপ্তির অধিকারের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, আমাদের সমাজে সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই সাধারণত তথ্য প্রাপ্তিতে বঞ্চিত থাকে । যার ফলে দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী পর্যাপ্ত তথ্য থেকে বঞ্চিত থাকে এবং তথ্য প্রাপ্তি থেকে উদ্ভূত নানা সুযোগ -সুবিধা ভোগ করতে পারে না । দারিদ্র্যতা ও স্বল্পশিক্ষা নারীদের মধ্যেই বেশি এবং নির্যাতনের শিকারেও নারীরা ভুক্তভোগী। নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়নে তথ্য প্রাপ্তির সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণে নারী ও প্রান্তিকজনের অংশগ্রহণে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য অধিকার আইন চর্চার মাধ্যমে আমাদের সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে ।
তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনটি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে সমাজ থেকে সকল অন্যায় ও দুর্নীতিমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে ।
তিনি আজ ঢাকায় গুলশানে হোটেল সিক্স সিজন এ ইউএসএআইডি এবং দ্যা কার্টার সেন্টার এর সহায়তায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) আয়োজনে ‘ তথ্য প্রাপ্তির অধিকারে নারীর অগ্রগতি ‘ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে বার্ষিক শিখন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
কর্মশালায় দ্য কার্টার সেন্টার বাংলাদেশের চিফ অব্ পার্টি সুমনা সুলতানা মাহমুদ সভাপতিত্ব করেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের বার্ষিক শিখনসমূহ সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি তার বক্তব্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু, সমাজের অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মশালার ভূমিকা ও তথ্য অধিকার চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরেন। অন্যান্যের মধ্যে ইউএসএআইডির বাংলাদেশের পরিচালক এলিনা টেনসি , কেবিনেট ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বক্তব্য রাখেন। উন্মুক্ত আলোচনায় সহযোগী এনজিও সমূহের প্রতিনিধি এবং নারী ও যুবদের তথ্য অধিকার প্রাপ্তির অভিজ্ঞতার সাফল্য কথা তুলে ধরেন । স্বাগত বক্তব্য রাখেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম ।
উপদেষ্টা বলেন, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারীদের মতামত, অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত প্রচুর গবেষণা কাজ ও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তথাপি নারীদের সফলতার পিছনে তথ্য অধিকারকে প্রত্যক্ষ নয় বরং পরোক্ষ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে । আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নারীদের তথ্য প্রাপ্তির মৌলিক অধিকার পুরোপুরি ও কার্যকরভাবে চর্চায় তাদের সক্ষমতার বিষয়টি খেয়াল করলে উল্লেখযোগ্য লিঙ্গ বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে উঠে । এর কারণ লিঙ্গ – সংবেদনশীল নীতি প্রণয়নে ব্যর্থতা, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সামাজিক -সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলোতে নারীদের সম্পৃক্ত না হওয়া প্রভৃতি বিষয়েও তথ্য অধিকার চর্চায় লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে ।
তিনি আরো বলেন মানবাধিকার এর যে কাজ সে ফোকাসটা আমাদেরকে তুলে ধরতে হবে। বৈষম্যহীন সাম্যের সমাজের জন্য গণতন্ত্রের জন্য, মূল্যবোধের জন্য আজও আমরা কথা বলি, অন্তর্বতীকালীন সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ও সজাগ আছে।
উল্লেখ্য জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তথ্য প্রাপ্তিতে নারীদের অধিকতর সক্ষম করে তোলার পাশাপাশি জাতীয় ও কর্ম এলাকার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে কার্যকর এবং শক্তিশালী করার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ভূমিকা রাখছে এই প্রকল্প । মানবিক সম্ভাবনা বিশেষ করে প্রান্তিক নারীদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ কে সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগানোর জন্য প্রকল্পটি ২০২৮ সালের মধ্যে রাজশাহী, সাতক্ষীরা, খাগড়াছড়ি এবং সিলেটসহ ১০ টি জেলায় তথ্যে নারীদের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি বাস্তবায়িত হবে বলে উল্লেখ করা হয় কর্মশালায় ।
এরপর তিনি সিরডাপের এটিএম শামসুল হক অডিটরিয়মে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে সরকারি কৃষি সেবা ও ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে গ্রামীণ নারী কৃষকের অন্তর্ভূক্তি এবং বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা, নারীই শক্তি উল্লেখ করে বলেন, সমাজের তৃণমূলে বঞ্চিত নারীরা যারা কাজ করছেন তাদের কৃষি সেবা ও ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে সরকার নতুন করে পরিকল্পনা নিচ্ছেন।