চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজি ফুলকপি চাষ করে ফলন না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চাষীদের অভিযোগ, সিনজেনটা কোম্পানীর ‘হোয়াইট গোল্ড’ বীজ কিনে তারা এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। ফসল ওঠার সময় পেরিয়ে গেলেও একটি গাছেও ফুল আসেনি। মাঠেই পঁচে নষ্ট হচ্ছে পাতা ও কান্ড। ফলন বিপর্যয়ে ওই বীজ কোম্পানীকেই দূষছেন চাষীরা। এ ঘটনায় বীজ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও ক্ষতিপূরনের দাবিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। এ নিয়ে কৃষি বিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ইতিমধ্যে কৃষি বিভাগের বেশ কয়েকটি দল ওই ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেতগুলো পরির্দশন করেছেন। প্রাথমিক তদন্তেও বীজের সমস্যাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, গ্রামটির একটি মাঠেই অন্তত একশ’ বিঘার ফুলকপির ফলন নষ্ট হয়েছে। ফসল ওঠার সময় পার হলেও ফুলকপির গাছ মাঠেই নাজুক পড়ে আছে। কুকড়িয়ে ঝরে পড়ছে পাতা, ফলন নেই একটি গাছেও। এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন গ্রামের অন্তত অর্ধশত চাষী। বেলগাছি গ্রামের হাজীমোড়ের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, আমার সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে সিনজেনটা কোম্পানির হোয়াইট গোল্ড কপির বীজ লাগিয়েছি। কেনার সময় ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে কপি বিক্রির কথা বললেও ৭০ দিন পেরিয়ে গেলেও কিন্তু ফলনই হয়নি। পাতা দুর্বল হয়ে ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বেলগাছি পুরাতন মসজিদপাড়ার কৃষক বখতিয়ার শামীম শিপুল বলেন, এবার আড়াই বিঘা জমিতে ফুল কপির বীজ বুনেছি। বিঘায় চার থেকে সাড়ে চার প্যাকেট বীজ লাগে। প্রতি প্যাকেট বীজের মূল্য ৭০০ টাকা। জমি প্রস্তুত, সেচ, সার দিয়ে এক বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। ১ বিঘা জমিতে ফলন হলে মোটামুটি ৬৫-৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এখন এই গাছ কেটে ফেলা ছাড়া কিছুই করার নেই। আরেক কৃষক মনিরুজ্জামানের অভিযোগ, সিনজেনটা কোম্পানীর বীজ ব্যবহার করে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। জটিলতা দেখে বারবার ওই বীজ কোম্পানীর কাছে ধর্ণা দিলেও মেলেনি সমাধান। অথচ একই মাঠে অন্য কোম্পানীর বীজে ফলন হয়েছে আশানূরুপ। বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা। ভুক্তভোগী ৩১ জন কৃষক গত ২৯ অক্টোবর সিনজেনটা কোম্পানির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের কাছে। ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রাথমিক তদন্তেও বীজের সমস্যাকে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ভুক্তভোগী কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বেলগাছি গ্রামের মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখা হয়েছে। যেসব কৃষক সীনজেনটা কোম্পানির বীজ ব্যবহার করেছে তাদের ফলন হয়নি। কিন্তু পাশেই অন্য কোম্পানির বীজের ভালো ফলন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ওই বীজগুলো ছিল পুরাতন। যার ফলে গুনগত মান হরিয়েছে। এজন্য এমন ফলন বিপর্য ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে সিনজেনটা কোম্পানীর এসপিও সেলিম উদ্দীন জানান, শুধু ওই একটি মাঠেই নয়, আমাদের বীজ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। একটি প্লট দেখে তো বিচার করা যাবে না। ক্ষতিগ্রস্ত প্লটটি কৃষি বিভাগ ও বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা পরিদর্শন করেছেন। তাদের বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। তবে অনাবৃষ্টি অতিবৃষ্টির কারণে অনেক সময় ফসলের এই ক্ষতি হয়।