বঙ্গোপসাগরে একটি মাছ ধরার ট্রলারে জলদস্যুদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। ট্রলারের ১৯ জেলের ওপর গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে ৯ জেলেকে গুরুতর জখম করেছে জলদস্যুরা। এসময় জীবন বাঁচাতে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন ৯ জেলে। পরে জলদস্যুরা ট্রলারের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত আড়াইটার দিকে বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ৮০ কিলোমিটার পূর্বে বঙ্গোপসাগরে পায়রা বন্দর থেকে পশ্চিমে বয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এ তথ্য জানান।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জখম ৯ জেলেকে ট্রলারসহ ফিরিয়ে আনতে অপর একটি ট্রলার রওয়ানা দিয়েছেন।
ফিরে আসা জেলেরা হলেন—মো. মিরাজ হোসেন, আফজাল হোসেন, আলমগীর হোসেন, রায়হান, আব্দুল করিম, খোকন মিয়া, নুর মোহাম্মদ, মধু মিয়া ও আব্দুল হক।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন—কাইউম জোমাদ্দার (৩৫), ইয়াছিন জোমাদ্দার (৩২), আবুল কালাম (৫৮), শফিকুল মাঝি (৩৫), খাইরুল ইসলাম (৪০), আবদুল আলীম (৫৫), ফরিদ (৩৮), আবদুল হাই (৪০)। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অপর জেলের নাম জানা যায়নি। জেলেদের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা, তালতলী ও আমতলী এলাকায়।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বরগুনার চরকগাছিয়া গ্রামের মনির হোসেনের মালিকানার এফবি ভাই ভাই ট্রলারে বাজার-সদাই নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে ১৯ জেলে রওয়ানা হয়। শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে পাথরঘাটা থেকে ৮০ কিলোমিটার পূর্বে পায়রা বন্দর বয়া এলাকায় পিছন থেকে একটি ট্রলার ধাক্কা দেয়। এ সময় ওই ট্রলারে অতর্কিত গুলি ছোড়ে। পরে ট্রলারে ওঠে জেলেদের কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়ে ৯ জেলে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ হয়। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক জেলেই গুলিবিদ্ধ ও কুপিয়ে জখম হয়। এর মধ্যে খোকন, মধু ও আব্দুল হকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ট্রলার মালিক মনির হোসেন বলেন, ৯ জেলে এখনও নিখোঁজ। বাকি ৯ জেলে গুরুতর জখম থাকায় তাদের ফিরিয়ে আনতে অন্য একটি ট্রলার পাঠানো হয়েছে। ফিরিয়ে আনতে যাওয়া জেলেরা জানায় পাথরঘাটার উদ্দেশ্যে আসার পথে সাগরে আটকা পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ট্রলারে থাকা রসদসামগ্রী লুটে নিয়ে যায় দস্যুরা। তবে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়া জেলেদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত আমরা।
বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার আব্দুস ছালাম বলেন, আমরা এমন খবর শুনেছি। খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
এ বিষয়ে বরিশাল র্যাব-৮ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত এরকম তথ্য আমরা পাইনি। তবে মৎস্যজীবী নেতাদের সাথে কথা বলে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
কোস্ট গার্ড পাথরঘাটার স্টেশন কমান্ডার সাফায়েত আবরার বলেন, আমরা ঘটনাটি শোনার সাথে সাথে উপরস্থ কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। অনুমতি পেলেই নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করা হবে। তিনি আরও বলেন, এছাড়াও ঘটনাস্থল পাথরঘাটা থেকে ৪/৫ ঘণ্টার দূরত্ব হওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। কাছাকাছি নিজামপুর কোস্ট গার্ড রয়েছে, তারা অভিযান শুরু করতে পারে।