একদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং অপরদিকে রং সুতার দাম বৃদ্ধিতে পাবনার বেড়া উপজেলার তাঁত শিল্পের উৎপাদনে ধস নেমেছে। ইতিমধ্যে উপজেলার হাজার হাজার তাঁত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন উৎপাদন কাজে নিয়োজিত তাঁত শ্রমিকেরা। অন্যদিকে ঋণে জর্জরিত হয়ে কারখানার মালিকরা হয়েছেন দেওলিয়া।মহাজনের ঋন শোধে অনেকে তাঁদের তাঁত অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ বেড়া উপজেলা রয়েছে ১০ হাজারের অধিক হস্তচালিত ও বিদ্যুৎ চালিত তাঁত।
এই তাঁতের সাথে উৎপাদন কাজে জড়িত রয়েছে প্রায় ৩০হাজার নারি পুরুষ। এখানকার উৎপাদিত শাড়ি লুঙ্গি দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হয়। এমনকি এ পণ্য কিনতে ভারত থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন তাঁদের চাহিদার শাড়ি লুঙ্গি কিনতে।
সম্প্রতি জালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সুতা রং ও অন্যান্য উপকরণে দাম বেড়ে গিয়েছে। এছাড়া ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের যাতাকলে পড়ে অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। আবার অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম মহল্লার সিরাজুল ইসলাম জানান,তার কারখানায় বিদ্যুৎ চালিত ৩০টি তাঁত রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি ১০ টিকে তাঁত বন্ধ রেখে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিবেল সূতাতে ৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রং ও অন্যান্য উপকরণ।
এমন অবস্থায় তৈরি করা লুঙ্গি উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু হাটে নিয়ে তারা যে দামে বিক্রি করছেন তাঁতে করে উৎপাদন খরচ ঘরে তুলতে পারছেন না তাঁরা।
তিনি আরো জানান, বেড়া পৌর এলাকার অর্ধেক তাঁত কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ করে রেখেছেন কারখানার মালিকেরা।
উপজেলার নতুন আমিনপুর গ্রামের তাঁত শ্রমিক রউফ আলী জানান, তিনি আগে দিনে তিন থেকে চারটি লুঙ্গি তৈরি করতেন। এখন সারাদিন দুটির বেশি তৈরি করতে পারেন না।
মালদাহ পাড়া গ্রামের তাঁত শ্রমিক আকরাম হোসেন পেঁচা কোলা গ্রামের সবুজ আলীসহ অনেকেই জানালেন আগে একজন শ্রমিক সপ্তাহে হাজার তিনেক টাকা মজুরি পেত।এখন তারা এক থেকে দেড় হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছে।বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অধিকাংশ সময় বসে কাটাতে হচ্ছে তাদের।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হাটের পাইকারি কাপড় বিক্রেতা বেড়া উপজেলার শহিদুল ইসলাম বলেন,করোনার মন্দা কাটিয়ে মাস ছয়েক হলো তাঁতিরা ইকটু স্বস্তিতে ফিরেছিল। হটাৎ করে জালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে তার ধাক্কা লেগেছে তাঁত শিল্পে।
৫০ কাউন্টের একবেল সুতা তিন সপ্তাহ আগে ১৭ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছিল।কিন্তু বর্তমান দাম বেড়ে তা ২৪ হাজার টাকায় উঠেছে। এমন অবস্থায় তাঁতিরা বাড়তি দামে সুতা কিনে উৎপাদন সচল রাখলেও বাড়তি দাম দিয়ে শাড়ি লুঙ্গি কিনছেন না অনেক ব্যবসায়ীরা।
ফলে পাইকারি বাজারে কাপড় বিক্রি অনেক কম হচ্ছে।এমন অবস্থায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
নতুন ভারেঙ্গা প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সভাপতি আলম মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার তাঁতিরা এমনিতেই নানা সংকটে চরম লোকসানে আছেন।
এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেলে সূতা,রং ও অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়িয়ে দিয়ে তাঁতিদেরকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি লোডশেডিং এমন অবস্থায় পৌছেছে যে শ্রমিকরা শ্রমঘন্টা মেলাতে পারছে ফলে ওইসকল তাঁত শ্রমিকেরা কেউ রিক্সা-ভ্যান কেউ শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত হয়েছে।আর কারখানা মালিকেরা লোকসানের মুখে কারখানার উৎপাদ কমিয়ে দিয়েছে।