সরকারের নির্দেশনায় নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্যাট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এর দিক নির্দেশনায় নরসিংদী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহ আলম মিয়ার তত্বাবধানে দীর্ঘদিন পরে হলেও আবারও প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে মাধবদী এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদ। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ধাপে ধাপে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।মাধবদী এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের প্রায় ৫ কি. মি. এলাকা অবৈধ ভবন মালিকদের দখলে ছিল যা পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হয় । তার মধ্যে মাধবদী বাজার সংলগ্ন নদের তীরে ৭০০ মিটার জুড়ে সবচেয়ে বেশি বহুতল ভবন গড়ে উঠেছিল। মাধবদীতে ১৫৭ জন অবৈধ ভবন মালিকদের দখলে থাকা ২৫৬ টি ভবন( ১ তলা থেকে ১৩ তলা পর্যন্ত) অভিযান পরিচালনা করে উচ্ছেদ করা হয়। মাধবদী একটি শিল্প নগরী সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে প্রায় আট লক্ষ লোকের বসবাস। সেই সুবাদে এখানে গড়ে ওঠেছে পঞ্চাশটিরও অধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেই সুযোগে কিছু অসাধু ভবন মালিক স্থানীয় তহশিল অফিসে যোগসাজসে নদীকে নাল জমিতে শ্রেনী ভুক্ত করে নদীর দুপারে গড়ে তুলেছে বহুতল ভবন। যার ফলে সময়ের ব্যবধানে মাধবদী বাজারের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের চিত্র পাল্টে গিয়ে রুপ নিয়েছে সরু খালে। পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা ছিল না। যার ফলে একটু বৃষ্টিতেই মাধবদী শহরে জমে থাকত হাঁটু পানি।মাধবদী এলাকার বয়জেষ্ঠ্য মুরুব্বিরা আপশোস করে বলেন এই নদীতে আমরা মাছ ধরেছি, সাতার কেটেছি, এ নদী দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় গয়না আসত, তখন এ নদী ছিল মাধবদী বাজারের প্রাণ। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি নকশা প্রনয়ন করেন সাবেক মাধবদী পৌর মেয়র হাজী মোঃ ইলিয়াছ। যা ততকালীন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান নরসিংদী সদর ১ আসনের সংসদ সদস্য লে: কর্নেল অব: মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু বীর প্রতিক উদ্বোধন করে ছিলেন। পাশাপাশি মাধবদী পৌর সভার বর্তমান পৌর মেয়র হাজী মোঃ মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক নদকে বাচাঁনোর জন্য নানামুখি উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন। জেলা প্রশাসন সুত্রে জানাযায়, মাধবদীর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদকে বাঁচাতে ২০১৪ সালে অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রনয়ণ শুরু করেন জেলা প্রশাসন। ধাপে ধাপে তালিকা প্রনয়ণের কার্যক্রম ২০১৭ সালে চুড়ান্ত হয়। এরপর ২০১৯ সালে তালিকাকৃত ১৫৭ জন্য অবৈধ দখলদারদের জেলা প্রশাসন তাদের অবৈধ স্থাপনা সড়ানোর জন্য নোটিশ প্রদান করেন, এর প্রেক্ষিতে ১০৬ জন্য অবৈধ দখলদার সেচ্ছায় তাদের অবৈধ স্থাপনা সড়িয়ে নেন। অবশিস্ট ৫১ জন্য অবৈধ দখলদারের স্থাপনা নথি সৃজন করে ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এর সুদক্ষ দিকনির্দেশনায় নরসিংদী সদর সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো: শাহ আলম মিয়ার নেতৃত্বে মাধবদী বাজার এলাকার ৭শত মিটার জুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সম্পূর্ন করা হয়। এ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য মামলার সম্মুখিন হতে হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। এতে কতিপয় দোকান মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উপকৃত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে স্থানীয় জনগণ। এই উচ্ছেদের ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে নদের প্রশস্ততা, অন্যদিকে ফুটে উঠছে নদের দুই তীরে নির্মিত বহুতল ভবনগুলোর নান্দনিক সৌন্দর্য। সবার স্বপ্ন নতুন করে খননের ফলে ব্রহ্মপুত্রে আবারও আসবে জোয়ারের পানি। স্বচ্ছ পানিতে আবারও ভাসবে ছোট-বড় নৌকা। নদের দুই তীরে নির্মাণ হবে ওয়াক ওয়ে। প্রচন্ড গরমে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে কিংবা সকাল-বিকালের হাটাহাটি সেরে নিতে নদের পাড়ে ভীড় জমাবে সাধারণ মানুষ। সবমিলিয়ে মাধবদীর শহরায়নে যোগ হবে এক নতুন মাত্রা। যার সুফল ভোগী হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর একটি পরিবেশ উপহার দেয়ার লক্ষ্যে বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মালিকদের এই ছাড় দেয়া একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এতদসত্বেও কিছু মানুষের মনে এই ক্ষতির রেশ টিকে থাকবে বহুকাল। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানটুকুই ছিলো যার শেষ সম্বল। এমন সব মানুষের কথা বিবেচনা করে নদী খনন প্রকল্পটিতে সরকারের নিযুক্ত কর্তা ব্যক্তিদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে শহরের নান্দনিকতার দিকে তাকিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের যাতে দীর্ঘশ্বাস না ঝরে, সেই লক্ষ্যে সরকারী সম্পত্তির বাইরে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পদের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণের যেন ব্যবস্থা করা হয়। মাধবদী এলাকার বয়জেষ্ঠ্য আঃ রহিম মিয়া বলেন বর্তমান সরকারের কারণে আবার এ নদীতে আগের মতো পানি টলমল করবে, নৌকা চলবে, শহরের মানুষ নদীর বাতাস পাবে। এজন্য এ কাজে জড়িত সকলে ধন্যবাদ। পরিশেষে, বর্তমান সরকারের নদ-নদী রক্ষায় গৃহীত যুগোপযোগী এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ মাধবদী বাসী। পাশাপাশি এই প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট নরসিংদীর সুযোগ্য জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান এলাকাবাসী।