একাদশে ভর্তিতে নানা অভিযোগ নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ছুটে আসছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ, স্কুল-কলেজ সংযুক্ত এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে- ভুঁইফোড় কলেজগুলো তৃতীয় পক্ষ দিয়ে আবেদন করা, পছন্দের কলেজে না হওয়ায় নিশ্চয়ন বাতিল, দুই ধাপে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া, নানা ধরনের সংশোধনসহ বিভিন্ন বিষয়ে। এ যেন অভিযোগের ‘স্তূপ’ পড়ছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। অনেকের সমস্যার সমাধান হচ্ছে, আবার হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সরেজমিনে এসব চিত্র দেখা যায়।
মনিপুর স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ইশিতা ইয়াসমিন রিতা একাদশে ভর্তির জন্য দুটি ধাপে আবেদন করেন। ভর্তির জন্য কোনো কলেজে মনোনীত না হওয়ায় অভিভাবকসহ রোববার শিক্ষা বোর্ডে আসেন।
এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রথম ধাপে পাঁচটি এবং দ্বিতীয় ধাপে ছয়টি কলেজ নির্বাচন করে একটিতেও ভর্তির জন্য মনোনীত করা হয়নি। ইতোমধ্যে ভালো কলেজগুলোতে আর আমার ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকছে না। এ কারণে শিক্ষা বোর্ডে বাবা-মাকে নিয়ে আসি। এখানে এলেও কোনো কাজ হয়নি।’ শিক্ষা বোর্ড থেকে তাকে তৃতীয় ধাপে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.০৬ পেয়েছেন শাহাদাত হোসেন। দ্বিতীয় ধাপে ছয়টি কলেজ নির্বাচন দিয়ে একটি বেসরকারি কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন। কিন্তু কলেজে গিয়ে সেখানে পরিবেশ পছন্দ না হওয়ায় তিনি ভর্তি নিশ্চয়ন বাতিল করতে অভিভাবকদের নিয়ে শিক্ষা বোর্ডে এসেছেন।
নরসিংদীর রায়পুরার সিরাজ নগর এম এ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন রাকিব মেহরাব। কলেজ ভর্তির জন্য আবেদন করতে গিয়ে দেখেন- একই এলাকার দুটি বেসরকারি কলেজ পর্যায়ক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দ দিয়ে আবেদন করা হয়ে গেছে। অথচ এসব কলেজে ভর্তি হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই। শিক্ষা বোর্ডে এসে লিখিতভাবে এ অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
এদের মতো এমন অনেকে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন, ভুলে গেছেন পাসওয়ার্ড, মোবাইল নম্বর ভুল ও পরিবর্তন করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন শিক্ষা বোর্ডে ছুটে এসে আর্তনাদ করছেন। অনেকে দিনভর এখানে-সেখানে দৌড়-ঝাঁপ করেও হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, সকলের নজর থাকে শীর্ষ পর্যায়ের কলেজে। এসব কলেজেই ভর্তির জন্য উপচে পড়া ভিড় থাকে। বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী এসব কলেজে আবেদন করায় অনেকে ভালো ফল করেও এখনও ভর্তির সুযোগ পাননি। এর মধ্যে প্রথম ধাপে প্রায় ১০ হাজার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী আবেদন করেও ভর্তিবঞ্চিত হন। এদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডের অধীনে রয়েছে ৬৮০ জন। এদের কিছু দ্বিতীয় ধাপে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
জানা গেছে, একাদশে ভর্তির বিষয়ে নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৫০০ জন শিক্ষার্থী-অভিভাবক আসছেন শিক্ষা বোর্ডে। অধিকাংশ অভিযোগ- নির্বাচিত কলেজ পছন্দ না হওয়ায় নিশ্চয়ন বাতিল করা, অনেকে আবেদন করেও ভর্তি থেকে বঞ্চিত, আবেদনে নানা ভুল সংশোধন ইত্যাদি। তবে দ্বিতীয় ধাপ থেকে ভুয়া আবেদনের অভিযোগ কমেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘গত বছর সাড়ে তিন হাজার ভুয়া আবেদনের অভিযোগ পেয়েছিলাম। এ বছর এখন পর্যন্ত ৭ শতাধিক আবেদন পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেলে দ্রুত ভর্তির ভুয়া আবেদন বাতিল করে নতুন করে আবেদনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই আবেদনে কলেজ নির্বাচন করেও পরে আর সেখানে ভর্তি হতে চাচ্ছে না বলে নিশ্চয়ন বাতিল করতে আসছে। তবে নিশ্চয়ন বাতিল করার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকা অনুযায়ী আসন শূন্য থাকলে অটো মাইগ্রেশন হয়ে কলেজ পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই এ বিষয়ে চিন্তার কিছু নেই যদি মাইগ্রেশনের পরও কলেজ পছন্দ না হয় তবে ভর্তি কার্যক্রম শেষে দেড় থেকে দুই মাস পর টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিয়ে অন্য কলেজে যাওয়ার সুযোগ পাবে।’
শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, ‘নিজের নম্বর বিবেচনা করে শূন্য থাকা সাপেক্ষে আবেদন করার সময় কলেজ নির্বাচন করতে হবে। আবেদন করে যারা ভর্তির সুযোগ পায়নি তৃতীয় ধাপে তারা সুযোগ পেতে পারে। এরপরও ভর্তি হতে না পারলে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে কলেজে গিয়ে ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে। সারাদেশে পর্যাপ্ত শূন্য আসন রয়েছে, ভর্তি থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না।’
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় শেষ হয়েছে। শিক্ষার্থী সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে দ্বিতীয় পর্যায়ের সিলেকশন এবং আবেদন বাতিল হবে।
তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ চলবে ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর। পছন্দক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল এবং তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ হবে ১০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত। সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া কলেজভিত্তিক চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হবে ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায়। ভর্তি চলবে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।