খুলনার রূপসার আলাইপুরস্থ মাদ্রাসা ছাত্র মুসা শিকদার হত্যার বিচারে চার আসামির ফাঁসির রায়ে অত্যন্ত আনন্দিত তার পরিবার। তবে রায়ের পূর্ব থেকে আসামী পক্ষের অব্যাহত হুমকি ধামকিতে তার পিতা-মাতার চোখে-মুখে অজানা আতঙ্কের ছাপ রয়েছে। অন্য সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে তারা। রায়ের পর থেকে আসামী পক্ষের লোকজন পরিবারের অন্যদের ক্ষতি করার নানা ষড়যন্ত্র করছে বলে নিহত মুছার বাবা জানান। মুসার পিতা মুস্তাকিম শিকদার জানান, “আমি গরীব মানুষ। অভাব-অনটনের সংসার। মাছের পোনা বিক্রি করে কোন রকম সংসার চলতে থাকে। পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য ছেলে মুসা মাদরাসায় লেখা-পড়া করার পাশাপাশি বাড়ির সামনে দোকানদারি করতো। দুই বছর আগে (২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর) ওকে হত্যার পর যখন লাশ পাওয়া যায় তখন থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন থানার ওসি আমাদের অভিযোগ কানেই তোলেনি। অভিযোগ লিখে নিয়ে থানায় গেলে হত্যার নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালীদের চাপে নানা টালবাহানা করেন থানার ঐ কর্মকর্তা। অবশেষে বিষয়টি বুঝতে পেরে এক সপ্তাহ পর ২৭ সেপ্টেম্বর ওর মা (মুসার মা) আদালতে অভিযোগ করে। পরে আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি রূপসা থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়।” তিনি আরও জানান, “ছেলে মুসাকে হারিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। মামলা চালাতে টাকা-পয়সা কোথায় পাবো, সে চিন্তা ছিলো সব সময়। তবে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ আমাদের সব সময় সহযোগিতা করেছেন। আদালতে যাওয়া-আসায় খরচও দিয়েছেন। মুসা হত্যা মামলায় খুনিদের শাস্তির এতোবড় রায় পাবো, এমন আসা একেবারেই ছিলো না। ভেবেছিলাম গরীবের জন্য বোধহয় কেউ নেই। ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকারও নেই। তাই সব সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে হত্যাকারীদের বিচার দাবি করতাম। দুই বছরের মধ্যে ৪ আসামীর ফাাঁসির রায়ে আমরা খুবই খুশি হয়েছি। এ কারণে মহান আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে আসামী পক্ষের লোকজনের হুমকি-ধামকিতে মাঝে মাঝে ছেলে হত্যার রায়ের সেই খুশি অন্য শংকায় পরিণত হয়েছে। রায়ের পর রূপসা থানা পুলিশ বাড়ি এসেছিলো, রাতভরও পাহারা দিয়েছে। তারা সার্বিক নিরপত্তা প্রদানের আশ্বাস দিলেও শংকা কাটছে না। কারণ ওরা এলাকার প্রভাবশালী।” নিহত মুসার মা রশিদা বেগম বলেন, “রায় পেয়ে আমরা খুশি হয়েছি। তবে আরো খুশি হবো রায় কার্যকর হলে। কেননা একজন মা’ই জানেন সন্তান হারানোর কি যন্ত্রনা। তিনি বলেন, আসামী রাহিম আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তার ওপার একটা ঘর করে সেখানে দলবল নিয়ে মাদক সেবনসহ নানা প্রকার অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকতো। এলাকার অনেকেই বিষয়টা জানলেও মুখ খুলতে সাহস পেত না। আল্লাহপাকের হুকুমে অপরাধীদের সঠিক বিচার হয়েছে। তদুপরি আল্লাহপাকের কাছে আমার প্রার্থনা এভাবে আর যেন মায়ের কোল খালি না হয়।”উপজেলার আলাইপুর গ্রামের মুস্তাকিমের ৫ ছেলে এক মেয়ের মধ্যে মুসা ও ইসা (জমজ) ছিলো ৩য় সন্তান। অন্য সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মুসার বাবা-মা।