করোনার কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষার ‘রিকভারি প্ল্যানে’ তিন বিকল্প রেখেই প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হচ্ছে। বুধবার (১২ আগস্ট) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা হয়েছে, যা আগামী সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে এই রিকভারি প্ল্যান নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিতে (নেপ) প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকের রিকভারি প্ল্যান তৈরি করেছে নেপ। আর মাধ্যমিকের রিকভারি প্ল্যান তৈরি করেছে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বিইডিইউ)।
উভয় সংস্থাই তাদের প্রস্তাবে বলেছে, সেপ্টেম্বরে স্কুল খুললে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অক্টোবর-নভেম্বরে খুললে নিজ নিজ স্কুলে ৫০ নম্বরের এমসিকিউয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি ডিসেম্বরে স্কুল খোলে তবে অটো পাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা যেতে পারে। এই তিন বিকল্প প্রস্তাব ঠিক রেখেই কাজ করছে এনসিটিবি।
সূত্র জানায়, শিক্ষার রিকভারি প্ল্যান নিয়ে গত ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সেপ্টেম্বরে স্কুল খোলা সম্ভব না হলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি) এ বছর না নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়। অন্যান্য শ্রেণিতে অটো পাসের মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করার ব্যাপারে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারেও আলোচনা হয়।
এনসিটিবির কর্মশালা সূত্রে জানা যায়, গতকাল এনসিটিবি ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছয়টি করে ১৮ বিষয়ের পাঠ্যসূচির ওপর কাজ করেছে। এগুলো হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। বিষয়গুলোর ওপর কাজ আজ শেষ করা হবে। আগামী ১৬ ও ১৭ আগস্ট এই তিন শ্রেণির ধর্ম ও নৈতিকতা বিষয়ের ওপর কাজ চলবে।
কর্মশালায় সর্বনিম্ন ৩০ দিন শ্রেণি কার্যক্রম চালানো সম্ভব হলে পাঠ্য বইয়ের কতটুকু অংশ পড়ানো হবে, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫০ ও ৭৩ কর্মদিবস সময় পেলে কতটুকু পড়ানো যাবে, তা-ও চিহ্নিত করার কাজ চলছে। তবে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করা হবে না। কারণ এ দুই শ্রেণিতে একই বই পড়ানো হয়। নবম শ্রেণিতে এ বছর যেটা পড়ানো সম্ভব হবে না, সেটা দশম শ্রেণিতে শেষ করা হবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘কবে স্কুল খুললে কারিকুলাম কী হবে, তা আমরা কর্মশালার মাধ্যমে ঠিক করছি। আগামী সোমবার পর্যন্ত আমাদের সময় লাগতে পারে। এরপর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
এদিকে গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে তার ওপর ভিত্তি করে তিনটি বিকল্প মাথায় রেখে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে আগামী সপ্তাহে পাঠানো হবে। আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে। কিন্তু এই পরীক্ষাটা নিতে হলে আমাদের পাঠদানের যে সময় আছে, সেই সময়টা পাচ্ছি না।
সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অক্টোবরে না খুললে নভেম্বরে খুলবে, নভেম্বরে না খুললে তখন বিকল্প ব্যবস্থা নেব।’
গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জেএসসি পরীক্ষা বাতিল এবং এইচএসসি পরীক্ষার তারিখের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারিকে বিবেচনায় নিয়ে জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা তাদের পর্যবেক্ষণসহ কিছু বিকল্প প্রস্তাব প্রদান করেছেন। মন্ত্রণালয় প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে।