লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ৭৮ জন নিহত ও চার হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের কম্পন ২৪০ কিলোমিটার দূরে সাইপ্রাস থেকেও অনুভূত হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এর এক সংবাদে জানিয়েছে।
৪ আগস্ট মঙ্গলবার বিকালে বৈরুত বন্দরে বড় ধরনের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো লেবাননের রাজধানী। এতে শহরের বিভিন্ন অংশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। লেবাননের পুরো শহরজুড়েই কম্পন অনুভূত হয়। বিস্ফোরণস্থলে কয়েক মাইল দূরের ভবনের জানালাও ভেঙে গেছে।
নিকোসিয়া নামে সাইপ্রাসের রাজধানীর এক বাসিন্দা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তাদের বাড়ি কেঁপে উঠেছিল।
সাংবাদিক এমিলিয়া পাপাদোপলাস জানিয়েছেন, লিমাসল থেকে তিনি বিস্ফোরণের কম্পন অনুভব করেছেন। তিনি ভেবেছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনাস্থলের ১০ কিলোমিটার দূরের বাড়িগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকায় স্থানীয়ভাবে তোলা ছবি ও ভিডিওতে ভাঙা কাচ ও দরজা-জানালার ভগ্নাংশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানিয়েছে, বন্দরের রাসায়নিকের গুদাম থেকে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও হাসপাতাল সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ২৫ জনের লাশ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি নিহতের সংখ্যা ৫০ বলে জানিয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসানকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৭৮ এবং আহত হয়েছে চার হাজার জন।
একসঙ্গে এত আহত মানুষের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বৈরুতের হাসপাতালগুলো। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এসব আহত মানুষকে সেবা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। অনেক হাসপাতাল স্থানের সংকুলান না হওয়ায় আর কোনো রোগী নিতে পারছে না।
ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে কিছু দিন ধরে উত্তেজনা চললেও এ বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা নাকচ করেছে তেল আবিব।
লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের রায়ের তিন দিন আগে সংঘটিত এই বিস্ফোরণের কারণ এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড় গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে, এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যেতে দেখা যায়।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণে বাড়ি-ঘর এমন কেঁপে ওঠেছিল যে স্থানীয়রা ভাবছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে।
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে মানুষের চিৎকার ও ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। বাড়িঘরের জানালার কাচ ও বেলকনি ভেঙেও অনেকে আহত হন।
রেডক্রসের লেবানিজ শাখার প্রধান জর্জ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ এই বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করছি। বিস্ফোরণস্থলের পাশে কিংবা সেখান থেকে অনেক দূরের রাস্তাগুলোতে যত্রতত্র আহত ও নিহত মানুষ পড়ে আছে।’ আহত বহু মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে চিকিৎসার জন্য।
আল জাজিরার সাংবাদিক তিমোর আজহারি বলেন, “বৈরুত হাসপাতালের করিডোরও ভরে গেছে আহত ও রক্তাক্ত মানুষে।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান বলেন, বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে অনেক মানুষকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বুধবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। তিনি এই বিস্ফোরণকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইরান, ইসরায়েল এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে লেবাননকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।
যে স্থানটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে বন্দরের গুদাম রয়েছে। লেবননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) বন্দরের গুদামে প্রথম আগুন লাগার কথা জানায়। এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, গুদামে রাসায়নিকের মজুদও রয়েছে।
লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আল জাজিরাকে বলেছেন, বন্দরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ করা ছিল। তা থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেখানে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুদ কেন ছিল, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে তার জবাবদিহি চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
লেবাননের সম্প্রচার মাধ্যম ‘মায়াদিন’ দেশটির কাস্টমস পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে, কয়েক টন নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়েছে। আগুন ও বিস্ফোরণটি দুর্ঘটনাবশত ঘটে থাকতে পারে, বলা হচ্ছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে।
লেবাননের প্রেসিডন্ট মিচেল ওন দেশের সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেছেন, বিস্ফোরণের জন্য যারাই দায়ী হোক, তাদের চরম মাশুল দিতে হবে। রাসায়নির গুদাম থেকে এই বিস্ফোরণের ধারণা করলেও তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি প্রধানমন্ত্রী।