ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। ওইদিন থেকে আওয়ামী লীগের কোনো মন্ত্রী এমপি বা বড় নেতাকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি।
তাদের একটি বড় অংশ ৫ আগস্টের আগে-পরে বিদেশে পালিয়েছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। অভ্যুত্থানের আগেই গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল, আওয়ামী লীগের কয়েক ডজন শীর্ষ নেতা দেশ ছেড়েছেন।
তবে ৫ আগস্টের পর দেশেই আত্মগোপানে থাকা হাসিনার একজন উপদেষ্টা, শীর্ষ সাবেক দুজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ রিমান্ডে আছেন, কোনো কোনো নেতাকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।
এখনও অনেক নেতা পলাতক, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হত্যা মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি দল রাজধানীর বনশ্রী থেকে আটক করে। নেওয়া হয় ডিবি হেফাজতে। তিনি ২০০৮ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি ১৯৯৬ সালে একই আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন।
একই রাতে ও একই এলাকা থেকে আটক করা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে। তিনি দ্বাদশ সংসদে নেত্রকোনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এছাড়া বরখাস্তের এক দিন পর মঙ্গলবার আটক হয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোয়াহেল। গত বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান সোহায়েল। এর আগে তিনি ছিলেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। তবে এদের তিনজনকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়েছে সেটি এখনো নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
এছাড়া মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৪ সালের পাঁচই জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বদি। এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসা ও পাচারের অভিযোগ বহু পুরোনো। তাকে নিয়ে নানা বিতর্কের পর গত একাদশ সংসদে উখিয়া টেকনাফ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তার স্ত্রী শাহীন আক্তার।
গত ১৪ অগাস্ট রাতে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
পরেরদিন রাতে রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকা থেকে আটক করা হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) রাতে বারিধারা এলাকা থেকে আটক করা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনিকে। একই রাতে আটক করা হয় আওয়ামী লীগ সরকারে সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে। মঙ্গলবার আদালতে আনা হলে তাদের দুজনকেই রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলের নেতা, বিচারক, সরকারি আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬২৬ জন ব্যক্তি বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে মামলার আসামি হওয়ায় চারজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিরা নিজ নিজ উদ্যোগে সেনাবাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেছে।