কেএমপি’র আওতাধীন খুলনা সোনাডাঙ্গা মডেল থানা এবং দৌলতপুর থানা এলাকার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি, হুমকি প্রদর্শন, চাঁদাদাবী ও প্রতারণার কর্মকান্ডে জড়িত ২জন প্রতারককে গতকাল গোয়েন্দা ভিত্তির মাধ্যমে গ্রেফতার করা হয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে কেএমপি’র সদর দপ্তরস্থ সম্মেলন কক্ষে খুলনার পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় এক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াকর্মীদের জানান। গ্রেফতারকৃত ২ প্রতারক ও চাঁদাবাজ দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সময়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা এবং দৌলতপুর থানা এলাকার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি, হুমকি প্রদর্শন, চাঁদা দাবী ও প্রতারণার কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে গোয়েন্দা ভিত্তির মাধ্যমে উক্ত ২ জন প্রতারক গ্রেফতার হয়েছে। এ সময়ে খুলনার পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক আরও জানান। আপনারা অবগত যে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর। পাশাপাশি আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, চোরাচালানকারী, মাদক, জঙ্গি, অস্ত্র, গোলাবারুদ, চোরাই মোটর সাইকেল, জুয়াড়ি, বিকাশ এবং অনলাইন প্রতারণায় জড়িত প্রতারক, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামী, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিশালী এবং নাশকতা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ বেতার খুলনায় অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত মোঃ সাঈদুজ্জামান(৩১) পিতা-শওকাত হোসেন মোড়ল, সাং-মোড়ল পাড়া, থানা-শ্যামনগর, জেলা-সাতক্ষীরার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে একটি মোবাইল নম্বর হতে কল করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নিজেকে বাংলাদেশ বেতার সদরদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সাঈদুজ্জামানকে তার কর্মস্থল থেকে অন্যত্র বদলীর হুমকি দিয়ে বদলীর তালিকা থেকে নাম কাটানোর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের টাকা দাবী করে। একইভাবে বাংলাদেশ বেতার খুলনা উপকেন্দ্রের ৯জনকে ফোন করে এবং মূখ্য পরিদর্শকের কার্যালয়,পাট অধিদপ্তর দৌলতপুর, খুলনার আরও কিছু কর্মকর্তাকে একই মোবাইল নাম্বার হতে কল দিয়ে অনৈতিক অর্থ প্রদানের হুমকি প্রদান করে। প্রতারকদ্বয় খুলনা পাট অধিদপ্তর এর মূখ্য পরিদর্শক এ.এম আক্তার হোসেনের নিকট হতে সুকৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী সাঈদুজ্জামান প্রতারকদের সার্বিক বিষয়ে পুলিশকে অবগত করলে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশ উক্ত ঘটনার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। গোপন অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিষয়ে তথ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ঘটনার বিষয়ে সাঈদুজ্জামানকে মামলা করার জন্য বলা হয়। উক্ত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম নীলফামারী জেলায় অভিযান পরিচালনা করে নীলফামারী জেলা পুলিশের সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত প্রতারক ১নং আসামি মোঃ মনোয়ার হোসেন ওরফে বাবু ও মোঃ শাহজালাল জিএম (৩৩) নীলফামারীদ্বয়কে নীলফামারী জেলার পাঁচ রাস্তা এলাকা থেকে গতকাল গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার তদন্তের পুলিশ জানতে পারে যে, তারা মূলত একটি সংঘবন্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। বিভিন্ন সময়ে প্রতারক চক্রটি সরকারি আমলা, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্নি বাহিনীর ও প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন প্রভাবশালী কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মানুষকে মোবাইলের মাধ্যমে ফোন করে প্রভাবিত করার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে প্রতারিত করে আসছিল। উক্ত ২জন শীর্ষ প্রতারক ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের পরে খুলনা কেএমপি’র সদর দপ্তরে গতকাল শনিবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন কেএমপির মান্যবর পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম(বার) পিপিএম- সেবা, কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল) মোছাঃ তাসলিমা খাতুন, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর)অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (এফএন্ডবি) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু, সহকারী পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) গোপীনাথ কানজিলাল, সহকারী পুলিশ কমিশনার (সোনাডাঙ্গা জোন) মোঃ আবু নাসের আল-আমিনসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকর্মীবৃন্দ এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।