সিলেট সিটি করপোরেশনের ধার্য করা হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। ইতিমধ্যে তারা হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনের। ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্সকে তারা লাগামহীন, অযৌক্তিক ও অন্যায্য বলে দাবি করেছেন। এই অবস্থায় নগরবাসীর সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। যদিও ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্সের ব্যাপারে দায় নিতে রাজি নন তিনি। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্সকে স্থগিত করা হয়েছিল বলে তার ওপর থেকে দায় সরিয়ে নিয়েছেন। নাগরিক সমাজের ভাষ্য হচ্ছে; ট্যাক্স যে-ই ধার্য করুক সেটা তো জনগণের ওপর পড়বে। সুতরাং এটি স্থগিত করে পুনরায় এসেসমেন্ট এবং আলোচনা ছাড়া ট্যাক্স আদায়ের কোনো পথ খোলা নেই। এজন্য প্রয়োজন হলে তারা আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে আইন কী বলে, সেটি এখন বড় প্রশ্ন।মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত কোনো সিদ্ধান্ত সিটি করপোরেশন স্থগিত করতে পারে কিনা- এ নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। সিলেটের সাবেক এডিশনাল পিপি এডভোকেট শামসুল ইসলামের মতে, মেয়র কিংবা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটি আইনগতভাবে ঠিক আছে। তবে; ধার্য ট্যাক্স অযৌক্তিক কিনা- সেটি ভিন্ন প্রশ্ন। ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এসেসমেন্টের পর সেটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। এখন সেটি স্থগিত করার অধিকার কেবল মন্ত্রণালয়ই রাখে। সুতরাং বর্তমান মেয়র কিংবা পরিষদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বিষয়টি কার্যকর করতে যাচ্ছেন বা করছেন। এখানে আইনি কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। এদিকে; আরোপিত হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে সিলেট নগরের সবখানেই অস্বস্তি বিরাজ করছে। ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে আন্দোলনের। এই অবস্থায় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আন্দোলনরত জনগণের সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার নগরের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকায় ট্যাক্স-বিরোধী স্থানীয়দের একটি বৈঠকে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন মেয়র। সেখানে তাকে দেখে জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই সভায় মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যে ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে সেটি জনগণ মানছে না। এজন্য ১৪ তারিখের যে সময়সীমা দেয়া হয়েছে সেটি আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দিলে ভালো হয়। একইসঙ্গে নতুন করে এসেসমেন্টের উদ্যোগ নিলে জনগণও সহায়তা করবে। জবাবে মেয়র বলেছেন, ‘আমার ওপর ভরসা রাখুন। জনগণের অসুবিধা হয়, এ ধরনের কোনো কাজই আমার দ্বারা হবে না।’ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ১৩ই মে তারা এ ব্যাপারে মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দেবেন। ট্যাক্সের ব্যাপারে তারা সুনির্দ্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন। সিলেটের নাগরিকবৃন্দের আহ্বায়ক ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্ল্যাহ শহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘যারা কর দেবেন, যারা অংশীজন, স্টেকহোল্ডার তাদের মতামত না নিয়ে যদি কর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে এ পদ্ধতিটি অবৈধ, অগণতান্ত্রিক ও জনস্বার্থের পরিপন্থি। এ পদ্ধতিতে যে কর আরোপ করা হয়েছে আমরা নাগরিকবৃন্দের পক্ষ থেকে সেটি প্রত্যাখ্যান করছি।’ সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ লোকমান আহমদ বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে, আমরা বলবো অনৈতিকভাবে, অস্বাভাবিক হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। যতদিন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে না নিয়ে যাওয়া হয়েছে নগরবাসী এই আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে চাই, সহনীয় পর্যায়ে দিতে চাই। এই অমানবিক, অসহনীয়, অযৌক্তিক, বেআইনি যেকোনো বিবেচনায় এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ সিলেট জেলা সিপিবি সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ট্যাক্স কিসের ভিত্তিতে কী মাত্রায় বৃদ্ধি করা হয়েছে সেটি এখনো বোঝা যাচ্ছে না। চল্লিশ টাকার ট্যাক্স চার হাজার টাকা করা হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করে এভাবে ট্যাক্স বৃদ্ধির কোনো কারণ ছিল না। তিনি আরোপিত করের আদেশ প্রত্যাহার করে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার পর সহনীয় পর্যায়ে ট্যাক্স আরোপের আহ্বান জানান।’ বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী এডভোকেট শিরিন আক্তার বলেন, ‘এমনিতেই মানুষের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বিপর্যস্ত। এই অবস্থায় যদি সাধারণ মানুষের চিন্তা না করে কর চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি কর আদায় বন্ধ রেখে গণশুনানি করে, রি-এসেস করে যৌক্তিক কর আরোপের দাবি জানান।’ বাসদ জেলা আহ্বায়ক আবু জাফর বলেছেন, ‘আরোপিত কর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নগরের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। মানুষের মধ্যে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। এ কারণে আমরা এই হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলের দাবি জানিয়ে যাচ্ছি।’ গণতন্ত্রী পার্টির জেলা সভাপতি মো. আরিফ মিয়া বলেছেন, ‘যে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে সেটি অন্যায়। আলোচনা করে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স বাড়াতে পারতেন। তা না করে একশ’ থেকে পাঁচশ’ শতাংশ ট্যাক্স বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে দাবি করেন তিনি।’