খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর রয়েছে । আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গী, মানব পাচার চক্রের মূলহোতা, মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামী, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিশালী নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন ব্যক্তিদেরকে গ্রেফতারের লক্ষে সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। কেএমপি’র মান্যবর পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক বিপিএম (বার) পিপিএম -সেবা
গতকাল কেএমপি’র অধীনস্থ লবণচরা থানা পুলিশ কর্তৃক মানব পাচারকারী ৬ মূলহোতাকে গ্রেফতারের পরে কেএমপি’র সদর দপ্তরে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে এ সমস্ত কথা বলেন। এ সময়ে খুলনার পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সহকারি পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) গোপীনাথ কানজিলাল এর নেতৃত্বে লবণচরা থানা পুলিশের একটি চৌকস আভিযানিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মোহাম্মদ নগর এলাকার রাজার রাইচ মিল সংলগ্ন আদিলুজ্জামান সড়কের ২য় লেন এর শেখ মিজানুর রহমান এর ২য় তলা বাড়ির নিচ তলা হতে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে যথাক্রমে ১নং আসামী মিল্টন মন্ডল (৪০) ২নং মোঃ সাইফুল ইসলাম (২১) ৩নং মোঃ হিমেল (২১) ৪নং খাদিজা বেগম (২২) ৫নং রত্না আক্তার ওরফে পায়েল (২০) এবং ৬নং রাবেয়া বেগম (২০) উভয়দের গ্রেফতারপূর্বক তাদের হেফাজতে থাকা ঘটনাস্থল হতে অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই জন ভিকটিম তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। যাদের ১ জনের বয়স ১৪ বছর এবং আরেক জনের বয়স ১৫ বছর। এ সময়ে অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় আসামীরা ভিকটিমদ্বয়কে গত ২ মাস পূর্বে যাত্রাপালায় গানবাজনা এবং অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে আসার পাশাপাশি ভিকটিমদ্বয়ের নগ্ন ছবি ধারণ করে তাদেরকে জোরপূর্বক আটক রেখে অনৈতিক কাজে লিপ্ত করতে বাধ্য করে। মানব পাচারকারীরা তারা অনৈতিক কাজে লিপ্ত না হলে তাদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে অবৈধভাবে জঘন্য কাজ করতে বাধ্য করে। এছাড়াও সেখানে রাতের বেলায় আসামীরা ডিজে পার্টিসহ আগতদের মনরঞ্জণের রঙ্গিন আলোয় নাচ-গানের ব্যবস্থা করে থাকে। এমতাবস্থায় ভিকটিমরা পতিতাবৃত্তিতে ও নাচ-গানে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে আরো জানা যায়, তারা ভিকটিমদের এভাবে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দীর্ঘকাল যাবৎ পতিতাবৃত্তি এবং ভারতের কলকাতা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও সুরাটসহ বিভিন্ন প্রদেশে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে আসছিল। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উক্ত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে সেখান থেকে বিপুল সংখ্যক যৌন উত্তেজক ঔষধসহ সেক্স টয় টাইপের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য গত ৫ মার্চ ২০২৪ মেট্রোপলিটন পুলিশের হ্যালো কেএমপি অ্যাপসের ইনবক্সে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তির গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে যে মানব পাচার চক্রের সাথে জড়িত কতিপয় ব্যক্তি দুই জন ভিকটিমকে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানা এলাকার মোহাম্মদ নগরে রাজার রাইচ মিল সংলগ্ন আদিলুজ্জামান সড়কের ২য় লেনে এর জনৈক শেখ মিজানুর রহমান এর ২য় তলা বাড়ির নিচ তলায় আটক ভিকটিমদের পতিতাবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছে।
এ সময় আরও জানা যায়, বিগত ২ মাস যাবত বিভিন্ন জায়গায় যাত্রাপালায় গানবাজনা এবং অভিনয়ের কথা বলে ভিকটিমদ্বয়কে নিয়ে গেলেও তাদেরকে যাত্রাপালায় গানবাজনা এবং অভিনয় করতে দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে দালালের মাধ্যমে পার্টি ঠিক করে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে উক্ত মানব পাচার চক্রের মূলহোতারা বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয। এমন সংবাদের কেএমপি’র সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আরো জানা যায় গত ২/০৩/২০২৪ তারিখ সকালে ঘটনাস্থলের বাসায় এনে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লোকজনের সাথে আসামীরা কথা বার্তা বলে ও দাম দর ঠিক করে। সন্ত্রাসী আসামীরা ভিকটিমদ্বয়কে পতিতাবৃত্তি করানোর জন্য জোর জবরদস্তি করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটক করে রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে গত ৫ মার্চ গভীর রাতে আসামীরা ভিকটিমদ্বয়কে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে দালালের নিকট হস্তান্তর করতে যাচ্ছে বলে পুলিশ জানতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে মানব পাচার চক্রের মূল ৬ হোতাদের গতকাল রাতে গ্রেফতার করে। এ সংক্রান্ত ব্যাপারে সঙ্ঘবদ্ধ আসামীগণের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৭/১০/১১ ধারার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে লবণচরা থানায় একটি মামলা মামলা দায়ের করা হয়। যার নং- ৫, তারিখ-৫/৩/২০২৪, এবং ধারা-মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৭/১০/১১ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। যথানিয়মে ধৃত আসামীকে রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানা গেছে। মানব পাচার চক্রেের মূল হোতাদের আসল ঠিকানা যথাক্রমে ১নং মিল্টন মন্ডল(৪০) পিতা-অরুন মন্ডল, সাং-কাকমারী, থানা-ডুমুরিয়া, জেলা-খুলনা, এ/পি সাং-মোহাম্মদনগর, থানা-লবণচরা, খুলনা মহানগরী। ২নং মোঃ সাইফুল ইসলাম(২১), পিতা-শামসুর, সাং-লোকনাথপুর, থানা-দর্শনা, জেলা-চুয়াডাঙ্গা, এ/পি সাং-৩৭৫, নারকেলতলা আবাসন, থানা-মোংলা, জেলা-বাগেরহাট। ৩নং মোঃ হিমেল(২১), পিতা-জাফর ফরাজী ওরফে বাচ্চু, সাং-স্লুইজ গেট ৯নং ওয়ার্ড, থানা-কলাপাড়া, জেলা-পটুয়াখালী, এ/পি সাং-মোহাম্মদনগর মাদ্রাসা গলি, থানা-লবণচরা, খুলনা মহানগরী। ৪নং খাদিজা বেগম(২২), স্বামী-মিল্টন মন্ডল, সাং-কাকমারী, থানা-ডুমুরিয়া, জেলা-খুলনা, এ/পি সাং-মোহাম্মদনগর, থানা-লবণচরা, খুলনা মহানগরী। ৫নং রত্না আক্তার ওরফে পায়েল(২০), পিতা-মিলন আক্তার, সাং-৫নং মাছঘাট টিটি কলোনী, থানা-খুলনা সদর, খুলনা মহানগরী ৬নং রাবেয়া বেগম(২০) স্বামী-সাইফুল ইসলাম, সাং-৩৭৫, নারকেলতলা আবাসন, থানা-মোংলা, জেলা-বাগেরহাট। মূল মানব পাচার চক্রের হোতা ১নং আসামী মিল্টন মন্ডলের পেশায় ছিল এই মানব পাচার চক্রেের। মানব পাচার চক্রের মূলহোতার নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই। খুলনা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয় থানায় তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা। সে যাত্রাপালায় গান বাজনা করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং গানবাজনার আড়ালে সে উঠতি বয়সি তরুণীদের টার্গেট করে ফুসলিয়ে ভিনদেশে পাচার করে দেয়, পাশাপাশি সে মাদক ব্যবসায়ের সাথেও জড়িত। ব্যক্তি জীবনে সে বিবাহিত। তার রাজনৈতিক কোন পরিচয় নেই।
উল্লেখ্য উক্ত মানব পাচার চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে থানার রেকর্ডপত্র ও সিডিএমএস পর্যালোচনা করে দেখা যায় মানব পাচার চক্রের মূলহোতা গ্রেফতাকৃত আসামী ১নং মিল্টনমন্ডল(৪০) এর বিরুদ্ধে কেএমপি’র সোনাডাঙ্গা মডেল থানায়ও ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০(ক) ধারায় ৩টি মামলা রয়েছে। এ সময়ে উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে কেএমপি’র মান্যবর খুলনার পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক বিপিএম (বার) পিপিএম -সেবাসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ও গণমাধ্যমকর্মীরা এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।