বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ইতোমধ্যে ভূমি মালিকদের ৪ ধারার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অধিগ্রহণ পর্ব শেষ করে আগামী বছরের শুরুতেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। বগুড়া থেকে রেলপথে ঢাকা যেতে সান্তাহার, নাটোর এবং পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথে ঘুরে যেতে হয়। এতে করে সময়ের অপচয় হয়। অন্যদিকে রেলের অতিরিক্ত পথ যেতে খরচও বেশি হয়। এ অবস্থায় বগুড়াসহ উত্তর জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিলো বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মান। এ অবস্থায় প্রায় ৫ বছর আগে প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের নকশা সূত্রে জানা গেছে ৮৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য মোট ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। বগুড়া জেলা সীমানায় অধিগ্রহণ করা হবে ৪৭৯ দশমিক ১৫ একর। বাকি ৪২০ দশমিক ৬৮ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে সিরাজগঞ্জ জেলায়। ভূমি অধিগ্রহণ খাতের ব্যয় মেটানোর জন্য প্রকল্পে এক হাজার ৯২১ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। বর্তমানে বগুড়া থেকে সড়ক পথে ঢাকা পৌঁছাতে লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সেখানে ট্রেনে যেতে লাগে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। তথ্য মতে দুই জেলার মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার। নতুন রেলপথ চালু হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে ৫ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ওই প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় ঋণের অর্থে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেবে ভারত। শুরুতে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পর তারা ২০২৩ সালের ৩০ জুন চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করে। প্রকল্পের আওতায় ডুয়েল গেজের দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। একটি হলো বগুড়ার ছোট বেলাইল এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭৩ কিলোমিটার এবং অপরটি বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রাণীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার। মূলত সান্তাহারের দিক থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে সান্তাহার হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরগামী ট্রেনগুলো যাতে বগুড়া স্টেশনকে এড়িয়ে সরাসরি চলাচল করতে পারে সেজন্য কাহালু-রাণীরহাট রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। দুটি রেলপথ মিলিত হওয়ার কারণে বগুড়া শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে রাণীরহাটে একটি জংশনও নির্মাণ করা হবে। আরেকটি জংশন হবে সিরাজগঞ্জে। এছাড়া নতুন রেলপথের জন্য দুই জেলা সীমানায় আরও ৬টি স্টেশন স্থাপন করা হবে। সেগুলো হলো শেরপুর, আড়িয়া বাজার, ছোনকা, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ ও কৃষ্ণদিয়া। রেলওয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটির জন্য এ পর্যন্ত ২৫ কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। চলতি বছর আরও ৪৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নির্মাণ কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। এজন্য প্রয়োজনীয় নথি ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। বগুড়ার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা গাজী মুয়ীদুর রহমান জানান, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য জমির মালিকদের ৪ ধারার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।