নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে সই দিতে অস্বীকৃতির কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, তিনি একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা। তিনি যদি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তবে পদত্যাগ করে কথা বলা উচিত, অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি কোনোটাই করেননি— এটা শৃঙ্খলার পরিপন্থি।
ডেপুটি অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি দেখবে অ্যাটর্নি কার্যালয়।’
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) আয়োজিত এক আলোচনা সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, তার (এমরান আহম্মদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সাংবাদিকেরা জানতে চান, এমরানের বিষয়ে কী হবে? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখব।’
এদিকে এমরান আহম্মদের বক্তব্যে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, কাউকে খুশি করতে ডেপুটি অ্যাটর্নি এসব কথা বলেছেন। তার এই বক্তব্যের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আমিন উদ্দিন এসব কথা বলেন।
সোমবার ডেপুটি অ্যাটর্নি এমরান জানান, নোবেল বিজয়ী ইউনূসের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতি দিতে হাইকোর্টের কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তিনি এই বিবৃতি দেবেন না। তার এই বক্তব্য দেশব্যাপী আলোচিত হয়।
এমরান আহম্মদ ভূইয়া আরও বলেন, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি, তার সম্মানহানি করা হচ্ছে। তাকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী রয়েছেন। এই খোলা চিঠির প্রতিবাদে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের বিবৃতি লেখা কাগজে আইনজীবীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে আইনজীবীদের ‘নাম’ ও ‘স্বাক্ষর’-ঘর রয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া বলেন, ‘ড. ইউনুসের পক্ষে ১০৭ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টসহ অনেকেই বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ড. ইউনূসকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। এর বিপরীতে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে নোটিশ করা হয়েছে যে, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে কর্মরত সবাইকে এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার জন্য। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করব না।’ তবে এ কার্যালয়ের অন্যরা বলছেন, এ বিষয়ে কোনো নোটিশ বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
কেন করবেন না এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখেন ইসরাইলে বিচার সম্পর্কিত বিষয়ে আইন সংস্কার হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে সে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল অবস্থান নিয়েছেন। তাই এটা আমার নিজস্ব চিন্তা সেই রকমই।’ তিনি বলেন, ‘যে বিবৃতিটা ড. ইউনূসকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দিয়েছেন এটার সঙ্গে আমি একমত। আমি মনে করি ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি, তাকে সম্মানহানি করা হচ্ছে, এটা বিচারিক হয়রানি।’
এদিকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার এ বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, রাষ্ট্রের একজন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসাবে তিনি বলেছেন, ড. ইউনূসকে জুডিশিয়াল হয়রানি করা হচ্ছে। ড. ইউনূসের পক্ষে দেওয়া বিবৃতির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। তিনি বলেন, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া যে পদে আছেন সেই পদে থেকে এমন অবস্থান নিতে পারেন না। এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতায় পড়ে।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের একাধিক আইন কর্মকর্তা বলছেন, খোলা চিঠির প্রতিবাদে বিবৃতির জন্য গত রোববার থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন সাধারণ আইনজীবীরা। যার একটি কপি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকেই সই করেছেন, আবার কেউ কেউ করেননি। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে এতে সই করতে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।