গেলো ২৬ দিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার শারীরিক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। সিরোটিক লিভারের কারণে তার ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসে, বমি হয়, তেমন কিছু খেতে পারছেন না। চিকিৎসকেরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ রেখেছেন বিএনপি প্রধানকে।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে তার চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে জাহিদ হোসেন জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে আরো নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন। তবে তাকে আরও কত দিন হাসপাতালে থাকতে হবে, সে ব্যাপারে মেডিকেল বোর্ড এ মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না।
এদিকে, রবিবার রাত ১১ টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি ১ ঘন্টা অবস্থান করে, মেডিকেল বোডের চিকিৎসকদের সঙ্গে দলীয় প্রধানের স্বাস্থ্যের বিষয়ে আলোচনা করে বিস্তিারিত খোঁজ খবর নেন।
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেছেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সেরোটিক লিভোরের কারণে তার শরীরে নতুন বেশ কিছু উপসগ দেখা দিয়েছে। আর এই উপসর্গগুলো পরীক্ষা করেই মেডিকেল বোডের চিকিৎসকরা আপাতত চিকিৎসা দিচ্ছেন। এই রোগের যেহেতু সঠিক কোনো চিকিৎসা দেশে নেই; তাই খালেদা জিয়াকে সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ড. রফিক।
২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর চিকিৎসকরা জানান, খালেদা জিয়ার খালেদার লিভার সিরোসিস শনাক্ত করা হয়েছে, যার চিকিৎসা দেশে নেই। বিএনপি প্রধানের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. শামসুল আরেফিন জানান, ইউরোপ-আমেরিকার বিশেষ কয়েকটি হাসপাতালে এর চিকিৎসা হয়।
ডা. শামসুল আরেফিন বলেন, আমাদের শরীরে দুটি সার্কুলেশন সিস্টেম আছে। একটা হলো পোর্টাল সার্কুলেশন সিস্টেম, আরেকটা সিস্টেমিক সার্কুলেশন সিস্টেম। লিভারে দুটি সিস্টেমই কার্যকর। লিভারে টোটাল যে ব্লাডটা যায়, তার তিন ভাগের এক ভাগ যায় সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে। আর তিন ভাগের দুই ভাগ যায় পোর্টাল সার্কুলেশন থেকে।
তিনি আরও বলেন, এখানে যেটা হয়, তার পোর্টাল প্রেসার বেড়ে গেছে। কারণ তার লিভারের ভেতরে নরমাল চ্যানেলগুলো লিভার সিরোটিক প্রোসেসে ডিস্ট্রয় হয়েছে। যে কারণে পোর্টাল প্রেসার বেড়ে যায, সেজন্য যেসব ভেন থাকে খাদ্যনালিতে-সেগুলো ফুসে ওঠে এবং ফেটে যায়। সেজন্য সিভিআর ব্লিডিং হয়। এই সিচুয়েশনে আমরা যেটা করেছি সেটা ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। এটার পরে আবার ব্লিডিং হলে আরও কিছু জিনিস আছে, যেগুলো আমরা করি স্পেশাল কিছু কেমিক্যাল এজেন্ট আছে, সেগুলো ইনজেক্ট করি অনেক সময়। আনফরচুনেটলি সেটা আমাদের দ্বারা সম্ভব হয়নি এবং এখন আমাদের দেশে সেই ওষুধগুলো পাওয়া যায় না।
চিকিৎসক বলেন, তৃতীয়ত যেটা আছে, সেটা হলো সার্বজনিন, সেটা হলো টিপস। লিভারের ভেতরে টোটাল প্রেসার কমানোর জন্য সিস্টেমিক সার্কুলেশন এবং পোর্টাল সার্কুলেশনের মধ্যে একটা কমিউনকেশন করে দেয়া। এটা একটা হাইলি টেকনিক্যাল কাজ। এটা সচরাচর হয় না। আমাদের দেশে আমি দেখিনি কোনো টিপস করা রোগী এসেছে। যারা আমরা রোগীদের ডিল করি তাদের দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার ব্লিডিং হলে রোগীদের সার্ভাইভ করা কঠিন। সেজন্য এ সেন্টারগুলো মেইনলি আমেরিকা ও ইউরোপ বেজড। স্পেশালি ইউকে-জার্মানি এবং ইউএসএ। এখানে এগুলোর জন্য অ্যাডভান্স সেন্টার আছে। তারা সেখানে করে। তবে সেসব দেশেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নেই। দু-চারটা সেন্টার আছে। বিশ্বের সব রোগীরা সেসব সেন্টারে যায়।
এ সময় চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, তার যদি পুনরায় রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে সেটা বন্ধ করার মতো সাপোর্টিং টেকনোলজি আমাদের এখানে নেই। সেক্ষেত্রে উনার রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।
এর আগে গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার অ্যানজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদ্যন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন—খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্রোগে ভুগছেন। তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।
সর্বশেষ গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় হাসপাতালে পাঁচ দিন চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।