জেলায় চলতি মৌসুমে রসালো ফল লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে লিচু চাষিদের মুখে এবার তৃপ্তির হাসি। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় বেচা-বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। এ জেলার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশ জুড়ে রয়েছে সুনাম ও খ্যাতি। লিচু বাগানে প্রতিদিন শত শত মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসছে। এ যেন এক উৎসবের আমেজ। কেউ আবার শখ করে লিচু বাগানে ছবি তোলা দিয়ে ব্যস্ত, কেউ লিচু গাছ থেকে লিচু পারা নিয়ে ব্যস্ত। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায় চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৫৬৭ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। এ বছর জেলাতে প্রায় ২৪ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করা হবে। জেলায় সীমান্তবর্তী বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় বেশি লিচুর চাষ করা হয়েছে। জানা যায়, ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগর উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে লিচুর আবাদ করা শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় এখানকার ধানী জমিগুলোকেও লিচু বাগানে পরিণত করতে থাকেন চাষিরা। এসব বাগানে দেশি লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু চাষ করা হয়। এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই একটি করে লিচু গাছ আছে। যাদের বাড়িতেই একটু জায়গা আছে, তারা প্রত্যেকেই বাড়িতে অন্যান্য ফলের গাছের সঙ্গে লিচু গাছ লাগান। চাষিরা জানান, লিচু গাছে মুকুল আসার পর থেকে কয়েক দফা বাগান বিক্রি হয়। গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর প্রথমে বাগান কেনেন স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার মহাজনরা। গুটি একটু বড় হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় গাছ বিক্রি হয়। লিচু আকার ধারণ করলে তৃতীয় দফায় বিক্রি হয়। লিচু বড় হলে চতুর্থ দফায় বাগান বিক্রি হয়। বিজয়নগর উপজেলার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার হচ্ছে আউলিয়া বাজার। এছাড়াও উপজেলার মেরাশানী, মুকুন্দপুর, কাংকইরা বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল বাজার, আমতলী বাজারসহ আরো কয়েকটি বাজারে পাইকারি ভাবে লিচু বেচা-কেনা হয়। প্রতিদিন ভোর রাত ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এসব বাজারে লিচু বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন উপজেলার আউলিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকার লিচু বেচা-কেনা হয়। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাদঁপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা লিচু কেনে বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যায়। পাহাড়পুর ইউপির লিচু চাষি আবু হানিফ বলেন, প্রথম থেকে গাছের পরিচর্যা করে আসছি। গাছে মুকুল আসার পর থেকে গাছের নিচে কীটনাশক ও পানি দিতে হয়। এবার বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর ২ কানি জমিতে ৪০টা গাছে লিচু চাষ করা হয়েছে। লিচু আবাদ করতে তার ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিটা গাছে লিচু ভালো আসায় প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করা সম্ভব হবে। গত বছর সে ৯ লাখ টাকা লিচু বিক্রি করেছে বলে জানান। সিঙ্গারবিল গ্রামের লিচুর চাষি আজম মিয়া জানান, তার দুইটা বাগানে ৩৬টি লিচু গাছ আছে। গত ১০-১২দিন ধরে তিনি আউলিয়া বাজারে লিচু বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন তিনি। এবার ভালো ফলন খুবই হয়েছে। তার বাগানে যে পরিমাণ লিচু আছে আরো ৭-৮ দিন বিক্রি করতে পারবেন। এভাবেই এবার ভালো লিচুর ফলন হয়েছে বলে জানান বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবার লিচু চাষিরা। তাদেও মুখে এবার তৃপ্তির হাসি। আবার অনেকে আগামী মৌসুমে আর বেশি করে লিচু চাষ করার আগ্রহ কথা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, লিচুর ভালো ফলনের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৫৬৭ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। জেলার ৯ সীমান্তবর্তী উপজেলা বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা লিচুর চাষ করা হয়েছে। এ বছর জেলাতে প্রায় ২৪ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি।