রবিউল ইসলাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) দ্বিতীয় কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল যোগদান করেন অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান, ঢাবির সহকারী প্রক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও, তিনি জনপ্রিয় কলামিস্ট এবং টকশো ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে একবছর পূর্ণ করায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার স্বপ্ন-ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং এই একবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমন কেটেছে তাঁর এসব নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক নবচেতনার সঙ্গে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক নবচেতনার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. রবিউল ইসলাম।
দৈনিক নবচেতনা: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসাবে এক বছর পূর্তিতে আপনাকে অভিনন্দন৷
ড. মো.বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: ধন্যবাদ৷
দৈনিক নবচেতনা : গত এক বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কী কী পরিবর্তন দেখেছেন?
ড. মো.বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: আমি যোগদানে পরে প্রথমে বাজেট নিয়ে কাজ করি৷ জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সকলকে সাথে নিয়ে প্রত্যেকটা শাখার বাজেট কিভাবে আসলো সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি৷ আমার হাত ধরেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেটের উত্থাপন করা হয়েছে এবং কার জন্য কতটুকু বরাদ্দ সেটা সবাই জানতে পেরেছে৷
দৈনিক নবচেতনা: বিশ্ববিদ্যালয় আবাসন সমস্যা, সেশনজট, শিক্ষক স্বল্পতা সমস্যাগুলো রয়েছে? এগুলো নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
ড. মো.বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমি এসেই প্রথম ফেজের কাজটা সেটা সম্পন্ন করেছি৷ পিসিআর রিপোর্ট জমা দিয়েছি৷ পাশাপাশি ডিপিপি দ্বিতীয় ফেজের কাজের অগ্রগতি হিসাবে আমি আহবায়ক হিসাবে শিক্ষা মন্ত্রালয়ে প্রেরণ করেছি৷ অর্থাৎ এই বিষয়গুলো অনেকদূর এগিয়ে গেছে৷ আশা রাখি সামনের দিনগুলো ভালো ধরণের ফিডব্যাক পাবো৷ সরকারও যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্ব দিচ্ছে৷ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সকলে মিলে ছাত্র-শিক্ষকদের আবাসনের ব্যবস্থায় আমরা যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্ব দিচ্ছি৷ মেয়েদের ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে উপাচার্য মহোদয় ও প্রোভোস্টের সাথে আলোচনা করে কিভাবে দ্রুত হলে উঠানো যায় সেটা কিন্তু সম্ভব হয়েছে৷ ছাত্র-শিক্ষক কর্মকর্তা – কর্মচারী সকলের আবাসন ব্যবস্থা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটাও আমাদের নজরে আছে৷
সেশনজট করোনার কারণে বেড়েছে৷ শিক্ষার্থীরা যেন সময়মতো বের হতে পারে সেটার জন্য কাজ করছি৷ বেশকয়েকবার ডিন, চেয়ারম্যান, শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেছি৷ দ্রুত গতিতে শিক্ষার্থীরা যেন বের হতে পারে সেটাই আমাদের মূল কাজ৷ শিক্ষার্থীরা যেন সময়মতো বের হতে পারে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করেছি সামনের দিনে ইতিবাচকভাবে আমাদের আরও বেশি কাজ করার সুযোগ আছে৷
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট স্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে শিক্ষক সংকট প্রকট যা শিক্ষার্থীদের তুলনায় অপ্রতুল্য৷ শিক্ষক অপ্রতুল্য থাকলে শিক্ষার গুণগত শিক্ষা ও মান ঠিক থাকে না৷ শিক্ষকরা প্রচুর চেষ্টা করছে, তারা প্রচুর কর্মঘন্টা দিচ্ছে৷ কিন্তু সল্পতা থাকায় তাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে৷ সামনের দিনে দ্রুত গতিতে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রালয়ে আমাদের এ বিষয় নিয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে৷
দৈনিক নবচেতনা: আপনি শুরু থেকে ইতিবাচকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কথা বলছেন। সামনে কিভাবে এই ধারা অব্যাহত রাখবেন?
ড. মো.বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থাকে কিভাবে নেতৃত্ব দেওয়া যায় এবং শিক্ষার্থীদের মনের ভাষা বুঝে শিক্ষা কার্যক্রমটাকে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায় এই বিষয়টা কিন্তু আমার শিক্ষাজীবন থেকে দেখেছি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ফোরামে কাজ করতে যেয়ে আমার উপলব্ধি হয়েছে বিষয়টি৷ বিশ্ববিদ্যালয়টাকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে কিছু ইতিবাচক কার্যক্রম হাতে নিতে হয়৷ যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সব জায়গায় যেন কৃতীত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারে৷ তারা যেন কোন প্রকারের সেশনজটের কবলে না পড়ে সেজন্য সেমিনার, ওয়ার্কসপ, যুগ-উপযোগী শিক্ষা ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, ইন্ডাস্টির এর সাথে এলাইনস করে আমাদের একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে৷ নানা জায়গায় কোলাবরেশন প্রোগ্রাম চালু করতে হবে৷ তাহলে শিক্ষার্থীরা সেরা শিক্ষা কার্যক্রম পাবে এবং নানা সুযোগ সুবিধা তারা পাবে৷
দৈনিক নবচেতনা : শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে “বাজেট নেই”বলা হয় এমন মন্তব্য আপনার মতামত
কি?
ড. মো.বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: দেখুন আমরা এখন বৈশ্বিক সংকটে আছি। সারা পৃথিবী জুড়ে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে আমরা তার বাইরে না। বিশ্ববিদ্যালয়কে উচিত সরকারকে সহায়তা করা এবং যথেষ্ট পরিমানে কৃচ্ছ্রতাসাধন করা। আমরা চেষ্টা করছি সারাবিশ্ব জুড়ে চলমান শিক্ষার্থীদের বাজেট সংকটের মধ্য থেকে বেরিয়ে তাদের প্রয়োজনগুলো মিটআপ করার। বিশ্বজুড়ে চলমান সংকটের কারনে আমরা শিক্ষার্থীদের সকল প্রয়োজন মিটাতে পারছি আমাদের সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে হচ্ছে। আশা করছি, ইনশাল্লাহ! সুদিন ফিরে আসবে আর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের যে গতি সঞ্চার হয়েছে এর মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাবনার একটা দ্বার উন্মোচিত হবে। আমরা চেষ্টা করব শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে, কল্যাণে, প্রয়াসে আরও কীভাবে বাজেট বেশি মাত্রায় বাড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করার।
দৈনিক নবচেতনা : ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে কি কি পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়?
ড. মো.বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: ছাত্র রাজনীতি বিষয়টি খুবই ইতিবাচক৷ বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রমটাকে সুংসগঠিত করতে ছাত্র রাজনীতির গুরুত্ব রয়েছে৷ শিক্ষার্থীরা যেন সহনশীল রাজনীতি এবং ছাত্র-শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির ধারা সূচনা করতে পারে এজন্য তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে ৷ মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারায় তাদেরকে সানিত করা৷ স্মার্ট বাংলাদেশ ও আগামীর বাংলাদেশ বিনিমার্ণে ছাত্ররাজনীতির যথেষ্ট ভূমিকা আছে৷ তাদেরকে নানা ফোরামে সম্পৃক্ত করতে আমাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা প্রদান করতে হবে৷ পাশাপাশি নেতিবাচক রাজনীতিটা পরিহার করতে হবে৷ যে রাজনীতি শিক্ষা কার্যক্রম ও উন্নয়নকে ব্যহত করে সেই রাজনীতি থেকে দূরে থাকা উচিৎ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রাজনীতি ইতিবাচক ধারায় প্রচলিত হচ্ছে বলে আমি মনে করি।
দৈনিক নবচেতনা : অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও একাডেমিক ভবন নির্মাণে কোন পরিকল্পনা আছে কিনা!
ড. মো.বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: অবকাঠামোগত সংকট ছিলো আমি আসার পর সেই সংকট উত্তরনে উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ডিপিপি মাস্টার প্লান প্রজেক্ট জমা দিয়েছে আমরা সব কিছু এগিয়ে নিয়েছি, কিন্তু বৈশ্বিক ও দেশের সার্বিক সংকটের কারনে কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আশা করি ইনশাল্লাহ সরকার এই বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ঘাটতি দূর হবে। আমাদের একাডেমিক ভবনের সংকট আছে৷ সব কিছু আমাদের ম্যানেজ করতে হচ্ছে৷
দৈনিক নবচেতনা : এক কথায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে কোথায় দেখতে চান?
ড. মো.বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এটা আমার স্বপ্ন৷ আমি মনে করি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী৷ নানা সংকটের মধ্য দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি বা মাস্টার্সের জন্য যাচ্ছে পাশাপাশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চাকরিতে সাফল্যের সাথে অবদান রাখছে। এখনকার শিক্ষকরা অত্যন্ত আলোকিত তাদের যে মেধা জ্ঞান খুবই যুগ-উপযোগী৷ দেশী বিদেশী নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে এখানে জয়েন করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিয়ে চলেছে। আমি আশা করি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় হবে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি৷
দৈনিক নবচেতনা : দৈনিক নবচেতনাকে সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ৷
ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া : দৈনিক নবচেতনাকেও ধন্যবাদ।