চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ব্রীজঘাট বাজারটি ইজারা না দিতে আবারও চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (চউক)। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের সচিব (ভারপ্রাপ্ত) অমল গুহ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনকে বাজার ইজারার সকল কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যতায়, ‘এই ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে চউক কতৃক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ্য করেছেন।’
বুধবার (১৫ মার্চ) কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেয়া সিডিএ প্রেরিত ওই চিঠি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইউএনও অফিসের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা পপি।
তিনি জানান, ‘আজ সকালে চিঠিটা পেয়েছি। ইউএনও স্যারের সামনে এখনো পুটআপ দেওয়া হয়নি। যথা সময়ে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।’ সিডিএ একই চিঠির অনুলিপি প্রেরণ করেছেন জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান এবং চউকের চেয়ারম্যান পি.এ.টু।
চিঠিতে সিডিও উল্লেখ করেন, “চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (চউক) কতৃক বাস্তবায়িত ব্রীজঘাট হতে ডিসি রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এল.এ মামলা নং-১২/৬৭-৬৮ এবং ১৫৪/৬৭-৬৮ মূলে চরপাথরঘাটা মৌজার আর.এস ৩৩৫ ও ৩৫৩ দাগের আন্দর বি.এস ৩ নং খতিয়ানভূক্ত বি.এস দাগ নং-৬৬ ও ৮৪ চউক কতৃক অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগৃহীত জমিতে রাস্তা নির্মাণ করে অবশিষ্ট জমি ভবিষ্যতে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এল.এ মামলা ও বি.এস খতিয়ান মূলে উক্ত জমিটি চউক এর দখলীয় ও মালিকানাধীন।”
চিঠিতে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি চউক মালিকানাধীন উক্ত জমি ইজারা প্রদানের জন্য উপজেলা প্রশাসন কতৃক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে মর্মে জানা যায়। উক্ত জমি ইজারা তালিকা হতে বাদ দেয়া এবং ইজারা সম্পর্কিত সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ করে পত্র প্রেরণ করা হলে, উপজেলা প্রশাসন কতৃক ইজারা অব্যাহত রাখার বিষয়ে চউকে পত্র প্রেরণ করা হয়।”
ইউএনও’কে পাঠানো চিঠিতে চউক আরও জানিয়েছেন, “উক্ত জমিতে বিছিন্নভাবে হাটবাজার স্থাপন হলেও তা অননুমোদিত ও অবৈধ। ইতিপুর্বে সেখানে একাধিকবার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সেখানে স্থায়ী হাটবাজার স্থাপনের সুযোগ নেই। এল.এ মামলা মূলে অধিগ্রহণকৃত জমি চউক এর মালিকানাধীন এবং সে জমির মালিকানাসত্ত্ব উপজেলা প্রশাসনের নয়। জমিটি ইজারা প্রদান বা অন্য কোন কার্যক্রম গ্রহণের অবকাশ নাই। ইতিপূর্বেও জমিটি ইজারা প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও চউক এর আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত জমি ইজারা তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।”
চিঠিতে জানিয়েছেন, “বাজারের জমিটি ইজারা তালিকা থেকে বাদ দেয়া এবং ইজারা সম্পর্কিত সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো। ইজারা বাতিল না হলে চউক কতৃক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ্য করেছেন।’
জানতে চাইলে কর্ণফুলী ইউএনও মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমার টেবিলে এখনো সিডিএ’র চিঠি আসেনি। আসলে সিডিএ’র পত্রটি পড়ে অবশ্যই বিধি সম্মত ব্যবস্থা নেব।’ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এর ভারপ্রাপ্ত সচিব অমল গুহ বলেন, ‘বাজারের জায়গাটি চউক এর মালিকানাধীন, উপজেলা প্রশাসনের নয়। বিছিন্ন ভাবে ওই জায়গায় বাজার বসলেও স্থায়ী হাটবাজার স্থাপনের সুযোগ নেই। যদি উপজেলা প্রশাসন তা করতে চান, সিডিএ আইনী ব্যবস্থা নেবে।’
বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০টি হাটবাজার ইজারা দেয়া তালিকায় স্থান পেয়েছে চরপাথরঘাটার ব্রীজঘাট সন্ধ্যাবাজারটি। এবারেই প্রথম বাজারটির ইজারায় সরকারি মূল্য দেখানো হয় ২ লক্ষ ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা। আগামী ৩০ শে মার্চ পর্যন্ত চতুর্থ পর্যায়ে সিডিউল বিক্রয় ও গ্রহণের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে, চরপাথরঘাটার স্থানীয় লোকজন ও বাজার ব্যবসায়িদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারটির ইজারা বন্ধ না হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা অনশন বা আন্দোলনে নামবেন। দোকান বা বেচাকেনা বন্ধ রাখবেন। মানবন্ধন করবেন। প্রয়োজনে মন্ত্রীর কাছে যাবেন বলে তাঁরা তথ্য জানান।