পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে ভেজাল মসলার রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছে। ঘাসের বীজ, চাল ও ডালের গুঁড়া, ধানের তুষে রং মিশিয়ে তৈরি করা ভেজাল মসলা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তবে প্রশাসনের নজরদারির অভাবে খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই এলাকার বিভিন্ন মিলে দিনরাত তৈরি হচ্ছে ভেজাল মসলা। মুদি দোকান ও নগরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো ভেজাল মসলার মূল ক্রেতা। দাম কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ রান্নায় ভেজাল মসলা ব্যবহার করেন। বিভিন্ন সময়ে ভেজাল মসলা ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজাল মসলা তৈরিতে কাপড়ের রং ব্যবহার করা হয় যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অব্যাহতভাবে ভেজাল মসলা খেলে ক্যানসার, হেপাটাইটিস ও কিডনি বিনষ্ট হতে পারে। ভেজাল মসলা কারখানার মালিকরা পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে এই ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। থানা, ফাঁড়ি ও ডিবি পুলিশের স্বঘোষিত ক্যাশিয়াররা নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। ডিবির ক্যাশিয়ার প্রতি মিল থেকে মাসে ১০ হাজার, ফাঁড়ি আড়াই হাজার ও থানা পুলিশ ৫ হাজার টাকা করে সংগ্রহ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার নগরীর খাতুনগঞ্জের সেবা গলিতে তিনটি ভেজাল মসলা তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সোবহান জানান, কাঠের ভুসির সঙ্গে ক্ষতিকর রং মিশিয়ে মরিচের গুঁড়া, হলুদের গুঁড়া তৈরি করছে বলে মনে হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করেছি আমরা। তিনটি কারখানার মালিক পলাতক। তাই কারখানায় আমরা তালা মেরে দিয়েছি। এ বিষয়ে মামলাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও রাজাখালী এলাকায় অনেক ভেজাল মসলা তৈরির কারখানা রয়েছে। যেসব কারখানায় ভেজাল ও মানহীন মসলা তৈরি হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, লামাবাজারে আরিফ ও ইসলামের মিল, আসাদগঞ্জে আবদুল হাইয়ের মিল, খাতুনগঞ্জে বেলালের মিল, রাজাখালীতে হারুনের মিল, ফুলতলার মোস্তাকের মিল, জসিমের মিল, লিজা ফুডের হরিণ মার্কা ও বাকলিয়া বাইদ্যার টেকে ইদ্রিসের শাপলা মার্কা মসলা। এসব কারখানাসহ আরো অনেক কারখানা থেকে মসলার গুঁড়া বিভিন্ন এলাকায় খুচরা পাইকারি ও বিক্রেতাদের হাতে পৌঁছে যায়। এসব কারখানায় ঘাসের বীজের সঙ্গে রং মিশিয়ে ভেজাল গুঁড়া মসলা তৈরি করা হয়। ঘাসের বীজ বা কাউন যা পাখির খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তা ভেজাল মসলার মূল উপকরণ। ঘাসের বীজ গুঁড়া করে ক্ষতিকর রং মেশানো হয়। লাল রং মেশালে তৈরি হয়ে যায় মরিচের গুঁড়া আর হলুদ রং মেশালে একই গুঁড়া হয়ে যায় হলুদের। এর সঙ্গে কিছু শুকনা মরিচের গুঁড়া মেশালে মরিচের গুঁড়ায় হাল্কা ঝাল হয়। আর নকল হলুদের গুঁড়ায় কিছু আসল হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে দিলে ভেজাল মসলা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। এক মসলা ব্যবসায়ী জানান, গুঁড়া মসলায় যে রং মেশানো হয় তা কাপড়ে ব্যবহারের রং। নগরীর লয়েল রোডে এসব রং পাওয়া যায়। অথচ খাদ্যের পরিপূরক হিসেবে যে রং ব্যবহার করা হয় তার দাম প্রায় দ্বিগুণ। অধিক লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা কাপড়ের রং দিয়েই মসলা তৈরি করে যে কারণে জনস্বাস্থ্য ব্যাপক হুমকির মধ্যে রয়েছে।