১৯৭১ সালের ৭ মার্চে ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। মাত্র ১৮ মিনিটের এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে যার ফলশ্রুতিতে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসম্বরে আমরা অর্জন করি গৌরবময় বিজয়।
মহান এই দিবসকে স্মরণ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ রবিবার (১২ মার্চ) জবি কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে বিশেষ এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম। প্রধান বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত আলোচনা সভা সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: ইব্রাহীম ফারাজী এবং সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন।
ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুতেই বক্তব্য রাখেন মো: ইব্রাহীম ফারাজী। তিনি বলেন ,”জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মীরা খেয়ে না খেয়ে ছাত্রলীগ করে। কিছু অনুপ্রবেশকারী ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমারা একতাবদ্ধ হাতে তাদেরকে সবসময় রুখে দিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও শরীরে প্রাণ থাকা অবস্থায় কোন অস্থিরতা তৈরি করতে দিব না। শিক্ষা, মাদক, যৌন- নিপীড়ন কখনো একসাথে চলতে পারেনা”।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: ইমদাদুল হক বলেন, “বাঙালির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধুুু হয়ে উঠেছিলেন বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক আর এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁরই সহধর্মিণী ও বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সহযোদ্ধা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
আলোচনা সভায় সাদ্দাম হোসেন বলেম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে, শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সারা বিশ্বের কাছে সমাদৃত। আমরা স্বাধীনতা ঠিকই অর্জন করেছি কিন্তু মুক্তি অর্জন করতে পারিনি।যদি সত্যিই মুক্তি অর্জন করতে পারতাম তাহলে এদেশে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা হতো না।”
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকেরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, বাংলাদেশের স্বপ্নকে হত্যা করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের কাজে হাত দিয়েছিলেন তখনই ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।’
এ সময় বিএনপির সুষ্ঠু নির্বাচন দাবির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিএনপির ডিকশনারিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের সংজ্ঞা হচ্ছে, নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে। বিএনপির মতে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসলে সে নির্বাচন আর সুষ্ঠু হয় না।
এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে কলুষিত করার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার পরিকল্পনা থেকে বিচারপতি কে এম হাসানের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা, পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে সেনা শাসনের পথ সুগম করার জন্য বিএনপিই দায়ী। তখন আওয়ামী লীগের কোন আহবানে বিএনপি সাড়া দেয়নি, সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন পরোয়া তারা তখন করেনি।
মন্ত্রী তাজুল ইসলাম আরো বলেন, জাতির পিতা ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। অথচ সেই মহান নেতার ভাষণই একসময় বাংলাদেশের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ সময় মন্ত্রী বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে বিএনপি জামাতের এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রসঙ্গে বলেন, আদালতের রায়কে সম্মান না দেখিয়ে বিশ্ব নেতাদের দিয়ে চিঠি ইস্যু করে তিনি নিজের সম্মানহানিই করেছেন।