মাদারীপুরের ডাসারের শশিকরে ৩ দিন ব্যাপি চলছে শ্রীকৃষ্ণের নামকীর্তন। খোল, করতাল আর বাঁশির সুমধুর সুর। সেই সঙ্গে যোগ হচ্ছে হারমোনিয়াম ও বেহালার মিষ্টি শব্দ। এসব বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে খালি গলায় গাওয়া হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের নামকীর্তন। সুমধুর এ কীর্তন শুনতে জড়ো হয়েছেন হাজারো ভক্ত।
ভক্তরা একাগ্র মনে শুনছেন কীর্তন। বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনায় মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার শশীকর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তিন দিনব্যাপী ২৪ প্রহরব্যাপী এ মহানামযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ১৯৮০ সাল থেকে স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় এখানে শুরু করা হয় নামযজ্ঞের অনুষ্ঠান। সেই থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠানটি হয়ে আসছে। এ বছর ২৬ ডিসেম্বর সোমবার ভোর থেকে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে, অনুষ্ঠানটি চলবে ২৯ ডিসেম্বর বুধবার ভোর পর্যন্ত। এতে নামসুধা পরিবেশন করছে ছয়টি দল।
বরিশাল থেকে আসা মনোহর পাগল সম্প্রদায়, নিশিপাগল সম্প্রদায়, গোপালগঞ্জ থেকে আসা শ্যামা সম্প্রদায়, হরিচাঁদ সম্প্রদায়, শান্তিহরি সম্প্রদায়, শরীয়তপুর থেকে আসা রাম ঠাকুর সম্প্রদায়। এতে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় তিন হাজার মানুষ ছুটে এসেছেন নামকীর্তন শুনতে। এতে এক মিলনমেলার সৃষ্টি হয়েছে এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে।
দেখা যায়, শশীকর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তৈরি করা হয়েছে এক বিশাল প্যান্ডেল। সে প্যান্ডেলে ৯ সদস্যের একটি দল নামকীর্তন পরিবেশন করছে। প্রায় তিন হাজার মানুষ মাঠের মধ্যে মাদুরে বসে কীর্তন শুনছেন। প্যান্ডেলের পূর্ব পাশে বসেছে মেলা। নাগরদোলাসহ বিভিন্ন খাবার ও মনিহারি দোকানে ছিল মানুষের উপচে পডাভিড়। নানা বয়সী লোকের সমাগম ছিল এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে।
গোপালগঞ্জ থেকে কীর্তন শুনতে আসা ষাটোর্ধ্ব জীবন মল্লিক বলেন, এই কলিযুগে মানুষের মুক্তির একমাত্র পথই হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম শ্রবন করা। তার এই নাম শ্রবণ করলে ইহলোকে ও পরলোকে শান্তি পাওয়া যায়। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে এই নামকীর্তন শুনতে এসেছি। এখানে এসে আমার মন আনন্দিত হয়ে উঠেছে।
জীবন মল্লিকের মতো এই কীর্তন শুনতে বরিশালের গৌরনদী থেকে এসেছেন বাসুদেব কর্মকার। তিনি বলেন, আমি সেই ছোটবেলা থেকেই এই নামকীর্তন শুনতে আসি। একসময় মায়ের সঙ্গে হেঁটে আসতাম। এখন গাড়িতেই আসা যায়। যত দিন ঠাকুর বাঁচিয়ে রাখে, তত দিন যেন তার এই নাম শুনে যেতে পারি।
শশীকর সর্বজনীন উৎসব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নবগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিভূতি ভূষণ বাড়ৈ বলেন, দেশমাতৃকা ও বিশ্বজননীর সব সন্তানের কল্যাণ ও শান্তি কামনায় আমাদের এই নামকীর্তনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে এখানে বহু ভক্ত ছুটে আসে। এখানে আগত সব ভক্তের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রতিবছর এই দিনেই আমাদের এই অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।