রামগঞ্জ উপজেলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অযত্বে অবহেলায় পড়ে আছে মুক্তিযোদ্ধ কালিন সময়ে পাকিস্তানি বরবর হানাদার বাহিনী ও রাজাকার, আল বদর, আশ শামসের হাতে নির্মমভাবে নিহত শহীদের গণকবর ও বধ্যভূমি।
স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও এ সকল গণকবর ও বধ্যভূমি মর্যাদা রক্ষার্থে উপজেলার কেউ এগিয়ে আসেনি। এ সকল গণকবর ও বধ্যভূমি এখন লতাপাতা, ঝোঁপ জঙ্গলে ভরে গেছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসংখ্য স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে এ উপজেলা শহরে। এ উপজেলা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জায়গা করে নিলেও এখানকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদ হওয়ার স্থান, বধ্যভূমি ও গণকবর গুলো অযত্ন অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। উপজেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সে সময়ে নির্মমভাবে নিহত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামি মানুষের গণকবর বধ্যভূমি গুলো। এতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সুশিল সমাজের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ আহম্মদ পাটোয়ারী, সাবেক পৌর কাউন্সিলর মনোয়ার ইসলাম পাটোয়ারীসহ সুশিল সমাজের কয়েকজন জানান, আমাদের জানামতে রামগঞ্জে কয়েকটি গণকবর ও বধ্যভূমি রয়েছে এই গুলো অবস্থান হলো রামগঞ্জ থানা পিছনে ওয়াপদা বেড়িবাঁধের খালের পাড়, মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা ও উত্তরে সেনের পুকুর। মহান মুক্তিযোদ্ধের শেষ সময়ে রাজাকার আলবদর আশসামস বাহিনীর সহযোগিতা পাকিস্তানী বরবর হানাদার বাহিনী রামগঞ্জে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সহ শতাধিক নারী পুরুষকে ধরে এনে রামগঞ্জ মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
পরে লাশগুলি রামগঞ্জ থানার পিছনে ওয়াপদা বেডিবাঁধ সড়কে পশ্চিম পাশে গর্ত করে মাটি চাপা দেয়। দেশ স্বাধীনের পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি গণকবর ও বধ্যভূমি গুলো চিহৃত করে বাঁশের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণে রাখেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বর্তমানে অধিকাংশ গণকবরের স্মৃতি চিহ্ন গুলো এখন আর নেই।
অন্যদিকে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতি চিহ্নগুলো চলে গেছে সবার দৃষ্টির বাইরে। এসব স্থান এখন লতাপাতা ও ঝোপ জঙ্গলে ভেতর পড়ে আছে। কিছু গণকবর চিহ্নিত করা হলেও যথাযথ দেখাশোনার অভাবে তা অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এখন আর এসব গণকবর ও শহীদদের স্মৃতিচিহ্নে কেউ শ্রদ্ধা জানাতে যায় না। নতুন প্রজন্ম জানেই না কোথায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর রয়েছে।
বর্তমান মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ডাকবাংলা, রামগঞ্জ থানা, খাদ্যগুদাম ছিল তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্প। সেখানে প্রতিদিন মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিকামি অসংখ্য সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। হত্যার পর মরদেহ সামনের জেলা পরিষদের খালে ফেলে দিত। সেখানেও নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিচিহ্ন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহআলম বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে আমাদের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের গণকবর ও বধ্যভূমি গুলো। আমাদের দাবি, সরকারিভাবে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরগুলো শুধু চিহ্নিত করাই নয়, এগুলোকে আগামী প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরার ব্যবস্থা নিতে হবে।
বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও এভাবে শিয়াল কুকুরের বাসস্থান হয়ে অবহেলায় পড়ে আছে আমাদের সহযোদ্ধা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরগুলো।
মুক্তিযুদ্ধের এতদিন পেরিয়ে গেলেও এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে হাবীবা মীরা বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি আমরা জেনেছি। বিষয়টি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় আমরা খোঁজ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব। পরবর্তীতে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।