রাজশাহীতে চলতি বছরের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস জুড়ে নানা আলোচনা সমালোচনায় রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল হাসপাতালের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত এবং চিফ মেডিকেল অফিসারসহ জড়িত সিন্ডিকেটের বিষয়।
দৈনিক নবচেতনা পত্রিকায় এই দূর্ণীতির সংবাদ প্রকাশিত হয় অক্টোবর মাসে। কিন্তু উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও চুরিদারির সাথে সরাসরি জড়িতদের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় ‘দূর্ণীতিবাজরা ধরাছোঁয়ার বাইরে’ শিরোনামে দৈনিক নবচেতনা পত্রিকায় নভেম্বরে আবারও প্রকাশিত হয় সংবাদ। এর পরপরই নড়েচড়ে বসে রেলের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। দূর্ণীতির তদন্ত করতে গঠন হয়েছে তদন্ত কমিটি, শুরু হয়েছে তদন্ত।
বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিম) রাজশাহীর পক্ষ থেকে ডেপুটি চীফ অপারেটিং অফিসার (ডেপুটি সিওপিএস) হাসিনা খাতুনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার(ডিএমও) ডাঃ মারুফুল আলম ও ডিএসই (হেড কোয়ার্টার) আহমেদ ইশতিয়াক জহুর।
তদন্ত কমিটির প্রধান হাসিনা খাতুন বলেন, তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। অনেক গুলো নথিও সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলো যাচাইয়ের অপেক্ষায়। তদন্তের জন্য পাকশী-সহ বেশ কিছু জায়গায় যেতে হবে। সেসব কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হলে এর বেশী বলা সম্ভব নয়। তবে আশা করছি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারবো।
উল্লেখ্য, ঠিকাদারি কাজে মালামাল গ্রহণ না করে চালানে স্বাক্ষর, মোট বিলের শতকরা ৩৫ ভাগ কমিশন গ্রহণ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে দিয়ে চাহিদাপত্র তৈরি করে ২ কোটি টাকার বেশি লোপাটসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে পশ্চিমাঞ্চল রেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
এ দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ওষুধ চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও কর্মচারীরা আছেন বহাল তবিয়তে। ওষুধ কেনার সময় নির্দিষ্ট ওষুধ কোম্পানি থেকে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের কমিশন।
হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাতেও হচ্ছে নয়-ছয়। পশ্চিমাঞ্চলের চিফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) ডা. সুজিৎ কুমার রায় পাকশী ডিভিশনের ডিএমও থেকে পদোন্নতি পেয়ে ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ সালে সিএমও (পশ্চিম) হিসেবে যোগদান করেন।
সিএমও হিসেবে যোগদানের পর তিনি স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের শূন্যপদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন চতুর্থ শ্রেণির জমাদার, ড্রেসার, খালাসিদের। এ সময় লালমনিরহাট, পাকশী ও রাজশাহীর শুধু স্যানিটারি বিভাগ থেকেই এ চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৬ কোটি টাকা।
এদিকে লুটপাটের মহোৎসব শেষে চলতি বছরের ৭ নভেম্বর চাকরি জীবন শেষ করে অবসরে গেছেন পশ্চিম রেলের চীফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) ডাঃ সুজিত কুমার রায়।