মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চরফতে বাহাদুরপুর চৌকিদার বাড়ির পাশের খালের ওপর প্রায় দেড়শ ফুট লম্বা সেতুটি ভেঙে পড়ার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও পুনরায় নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভেঙে পড়া বাকি অংশে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে এলাকার। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুই গ্রামের হাজার হাজার কৃষক, দিনমজুরসহ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালকিনি উপজেলার শিকার মঙ্গল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চরফতে বাহাদুরপুর চৌকিদার বাড়ির পাশের খালের ওপর প্রায় দেড় শ ফুট লম্বা সেতুটি অবস্থিত। নব্বই দশকে নির্মিত সেতুটি ভেঙে গিয়ে অচল হয়ে পড়েছে ১৫ বছর আগে। নিরুপায় হয়ে স্থানীয় লোকজন সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে অনেকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানিয়েও কোনো ফল পায়নি তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, খালের মুখোমুখি স্থানে অবস্থিত প্রায় দেড় শ ফুট লম্বা ভাঙা সেতুটির ওপর রয়েছে সরু বাঁশের সাঁকো। তার ওপর দিয়ে দুটি গ্রামের নারী, পুরুষ, শিশু ও বয়স্ক মানুষ ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন। সাঁকোর দুদিক থেকে পারাপার হতে গিয়ে মুখোমুখি হলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এতে অনেক সময় শিশু, নারী ও বয়স্করা দুর্ঘটনার শিকার হন। এভাবেই বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি রয়েছে হাজারো মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, এ অঞ্চলের মানুষ কৃষিজীবী। তাদের উৎপাদিত ফসল শাকসবজি, ধান, গম ও গৃহপালিত পশু কালকিনি উপজেলা শহর ও মাদারীপুর জেলা শহরে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এই সাঁকো দিয়ে তা নেওয়া সম্ভব হয় না। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। একটি সেতু হলে এলাকার হাজারো মানুষের কষ্টের অবসান হবে। অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হবে তারা।
রহমান নামের এক কৃষক বলেন, আমার বয়স প্রায় ৬৫ বছর কিন্তু ১৫ বছর ধরে সেতু ছাড়া যে কষ্ট করেছি, এ রকম কষ্ট আগে করা প্রয়োজন হতো না। সেতুর ওপর সাঁকো সেখান দিয়ে গরু-ছাগলের জন্য খাবার আনতে গিয়ে মাঝেমধ্যে নিজে পড়ে গিয়ে আহত হতে হয়। আর তা না হলে প্রায় আধা কিলোমিটার পেছনে গিয়ে ঘুরে মাথায় করে খাবার নিয়ে আসতে হয়।
তিনি বলেন, এ সেতুটি নতুন করে করার জন্য অনেক দাবি জানিয়েছি। এখন আর দাবি জানাতে মন চায় না। তারপরও যদি এমপি মহোদয় যদি জানেন, তাহলে হয়তো করে দিতে পারেন।
শিকারমঙ্গল স্কুলের ছাত্রী সোনিয়া বলে, আমার বাড়ি শিকারমঙ্গলে। কিন্তু খালের ওপারে চরফতে বাহাদুরপুর একদিন ওপারে একটি মৃত্যুসংবাদ শুনে এই ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে দ্রুত যেতে গিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়েছিলাম। আমার বাবার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। না হয় আমরা বাঁচার কথা ছিল না।
শিকার মঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জানান, এ অঞ্চলের মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। কৃষি উৎপাদন ছাড়া এ এলাকার মানুষের জীবনযাপন খুবই মুশকিল। তাই উৎপাদিত ফসল, শাকসবজি, ধান, গম মাদারীপুর জেলা শহরে নিয়ে যেতে হলে এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। প্রতিবছর এই এলাকার লোকজনের স্বেচ্ছাশ্রম ও সহযোগিতায় বছরে দুবার ব্রিজের ওপর বাশেঁর সাঁকো তৈরি করা হয়। জনস্বার্থে অতি দ্রুত এখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য অনুরোধ করছি।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমি এলাকায় খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।