বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন। আজ ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এ দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে (হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি) এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জন্ম হয় ক্ষমতাসীন এই দলটির। এরপর জাতি গঠনের প্রতিটি সোপানে ও স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে আওয়ামী লীগ।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ভ্রান্ত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর বাঙালি জাতির ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, নির্যাতন, চরম অবেহলা ও দুঃশাসনে নিষ্পেষিত বাংলার জনগণের মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ।
জন্মলগ্নে এ সংগঠনের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার কেএম দাস লেনে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ প্রাঙ্গণে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী মুসলিম লীগের প্রগতিশীল কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনটির প্রথম কমিটিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলে থাকা অবস্থায় যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ নির্মাণের আদর্শ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা।
যার প্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু এ দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারাও।
আওয়ামী লীগের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে স্বাধিকার আদায়ের জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। সেই ৬ দফা আন্দোলনের পথ বেয়েই ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ ও ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সফল নায়ক ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
দীর্ঘ এত বছরের পথপরিক্রমায় দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে অনেক চড়াই-উতরাই পেরুতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনেকটা অস্তিত্ব সংকটেই পড়ে আওয়ামী লীগ। দলের ভেতরেও শুরু হয় ভাঙন। এর মধ্যে আব্দুল মালেক উকিল- সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের দৃঢ়তায় সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করে দলটি।
১৯৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফিরতে সক্ষম হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এক যুগ ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে দলকে সংগঠিত করেন তিনি। স্বৈরাচারবিরোধী তীব্র গণআন্দোলনও হয় তার নেতৃত্বে। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবার সরকার গঠন করে দলটি। তখন থেকে টানা তিন মেয়াদে সরকারে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর সুখী, সমৃদ্ধ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়াসহ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবার সীমিত পরিসরে পালন করা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ২৩ জুন সূর্যদয়ের সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, একই দিন সকাল ৯টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন।
এছাড়া ২৩ জুন বেলা ৩টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আলোচনা সভা। সভায় গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালানো হবে এবং বিশেষ ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দিবসটি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের সংগঠনগুলোকে, বিশেষ করে মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ড এর সংগঠনগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দিবসটি পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।