বিস্ময় বালক। আনসু ফাতির নামের সঙ্গে এই দুটি শব্দ অদৃশ্যভাবে সেঁটে গেছে। কেউ কেউ তো আবার তাকে আগামী দিনের মেসিও বলেন! বার্সেলোনার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে গোল করার রেকর্ডটি যে এই ফাতিরই দখলে। সামনে ডাকছে আরেক ইতিহাস।
১৭ বছর বয়সী ফাতি এবার স্পেনের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার অপেক্ষায়। সেপ্টেম্বরে উয়েফা ন্যাশনস লিগে স্টুটগার্টে জার্মানির বিপক্ষে এবং মাদ্রিদে ইউক্রেনের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলবে স্পেন। আন্তর্জাতিক সেই দুই ম্যাচে খেলার কথা ফাতির।
সেই দুই ম্যাচের একটিতেও যদি গোল করতে পারেন, তবে স্পেনের ফুটবল ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে। তাতে যে স্প্যানিশ ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী গোলস্কোরার হবেন ফাতি। সেই ১৯২৫ সালে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ বছর ১১ মাস ১১ দিন বয়সে গোল করে এই রেকর্ডটি এখন পর্যন্ত নিজের দখলে রেখেছেন হুয়ান ইরাজকুইন।
আন্দালুসিয়ার হেরেরা থেকে উঠে আসা। পর্তুগাল থেকে এসে যেখানে আবাস গড়েছিলেন ফাতির বাবা বলি। তারপরের পথচলাটা স্বপ্নের মতো। ছোট্ট ফাতিকে দেখেই কাছের লোকজন বুঝতে পেরেছিলেন, ফুটবল বিশ্ব এক বিস্ময় তারকাকে পেতে যাচ্ছে!
হেরেরার মেয়র কাস্তোদিও মরোনো বলছিলেন, ‘আমি কখনও এমন কিছু দেখিনি। সে (ফাতি) ছিল সবার ছোট, কিন্তু তাকে খেলতে হতো সবার বড়দের সঙ্গে। কারণ সে ছিল অবিশ্বাস্য।’
‘সে বল পাস দিতো (মাইকেল) লওড্রাপের মতো, শরীরকে বাঁকিয়ে আক্রমণ, বাইসাইকেল কিক, গোল, ড্রিবল…সব কিছুই ছিল অসম্ভব রকমের। আমি ৫০ বছর ধরে খেলোয়াড়দের দেখে আসছি। কখনও তার মতো কাউকে দেখিনি।’
অথচ খেলার মাঠের চঞ্চল ফাতি স্কুলজীবনে ছিলেন একদম লাজুক স্বভাবের। এমনকি কারও সঙ্গে তেমন কথাও বলতেন না। মরেনো বলেন, ‘স্কুলে সে খুবই লজ্জা পেত, বিশেষ করে শুরুর দিকে। এটা স্বাভাবিক। সে খুব বেশি কথা বলতো না, কিন্তু আত্মনিবেদন ছিল। তার পরিবারকে দেখলে আপনি ভালোবাসতে বাধ্য। আমার পরিবারের সঙ্গে তাদের দারুণ সম্পর্ক ছিল।’
স্কুল ফুটবলে খেলার সময়ই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন ফাতি। স্কুলের দলকে তুলেছিলেন সেভিয়া আর মাদ্রিদের টুর্নামেন্টে। সেখান থেকে বড় দলের নজরে আসা ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার। সেটাই হলো, সেভিয়া তার সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই টিনএজ ফরোয়ার্ড বেছে নিলেন বার্সেলোনাকে।
হেরেরায় ফাতির স্কুলের পরিচালক তরুণ এই প্রতিভাকে নিয়ে বলেন, ‘সত্যটা হলো, আনসুর সব সময়ের ইচ্ছে ছিল বার্সেলোনায় খেলা। তাই সে যা পেয়েছে, আমি তাতে অবাক হইনি। ফেনোমেনন হওয়ার সব কিছুই তার মধ্যে আছে, সে পারবে। আমরা এখনও তার সত্যিকারের সামর্থ্যটা দেখিনি।’