গাইবান্ধায় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক পুলিশ সুপার কামাল হোসেনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে গাইবান্ধার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী) আদালতে মামলাটি দায়ের করেন আহত ওয়াহেদুর রহমান।
পরে আদালতের বিচারক আব্দুল মতিন শুনানি শেষে মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। এ সময় আদালতে আহত বাদী ও সাক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বাদী ওয়াহেদুর রহমান (৪২) সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হলদিয়া এলাকার দিল মোহাম্মদের ছেলে। তিনি পেশায় টেইলার মাস্টার।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন-গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইব্রাহিম, গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মন্ডল, জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার সাঈদ হাসান লোটন, সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আহসান হাবীব রাজীব, নিষিদ্ধ সংগঠন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফ সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন মামুনসহ আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী ওয়াহেদুর রহমান বলেন, আমি পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলাম। বাড়িতে থেকে স্বৈরাচারের দোসর ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগসহ তাদের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ওইদিনের ঘটনায় অসংখ্য আহত ছাত্র-জনতার হয়ে কোনো রাজনৈতিক দল প্রকৃত দোষীদের বিচার দাবি করেনি বা মামলা করলেও প্রকৃত দোষীদের আসামি করেনি। এজন্য আজ সকল আহতদের বিচারের দাবিতে আমি বাদী হয়ে আদালতে মামলাটি করি।
মামলার সাক্ষী আহত রাশেদুজ্জামান আশিক আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, দেশের প্রত্যেকটি স্তরের স্বৈরাচারের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। গত আগস্ট মাসের চার তারিখে যেসকল পুলিশ অফিসারদের নির্দেশে আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। আজও তারাই গাইবান্ধা এসপি অফিসে কর্মরত আছেন।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট রেজওয়ানুল হক মামলার এজাহার সূত্রে জানান, গত ৪ আগস্ট দুপুরে একটি মিছিল গাইবান্ধার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে দিয়ে সার্কিট হাউজে যাওয়ার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-জনতার উপর গুলি করে পুলিশ। এতে বাদী ওয়াহেদুর রহমান তার সঙ্গে থাকা রাশেদুজ্জামান আশিকসহ নাম না জানা চার শতাধিক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানো তৎকালীন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
একপর্যায়ে হাসপাতাল থেকে আহতদের বের করে দেওয়া হয়। ওইদিন ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে জেলার পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর গুলি এবং হামলা করে হত্যা চেষ্টা চালায়।
তিনি বলেন, মামলায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এতে গাইবান্ধার সাবেক পুলিশ সুপার কামাল হোসেনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।