বাংলাদেশ ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে সবাইকে সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। মাফিয়া সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার সময় বিশ্বে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। ক্ষমতা হারিয়ে পরাজিত অপশক্তি এখন আবার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ পক্ষের সব শক্তিকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির এক আলোচনা সভায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন। তিনি আলোচনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত-দুটিকে কার্যকর করা গেলেই রাষ্ট্র ও রাজনীতির উল্লেখযোগ্য গুণগত সংস্কার নিশ্চিত হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা গেলে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ কিংবা প্রসিদ্ধ করার মতো অপ্রিয় কাজের দায়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে না। বরং জনগণ নিজের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে খুনি, লুটেরা, টাকা পাচারকারী কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে থাকা মাফিয়া চক্রকে প্রত্যাখ্যান করবে।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এমন হওয়া প্রয়োজন, যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোট ছাড়া কোনোভাবেই একজন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে সক্ষম হবেন না। এমন রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে নিশিরাতে ভোটের আয়োজন কিংবা ডামি প্রার্থীর জনপ্রতিনিধি হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাতে রাজনীতি জনগণের আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে। বিজয়ের জন্য জনগণের রায় নিতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রে জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালতকে কার্যকর এবং শক্তিশালী করা গেলেই রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য গুণগত সংস্কার নিশ্চিত করা যাবে। যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচার হতে হবে রাষ্ট্রীয় আদালতে। কোনো ব্যক্তি বা দলের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ রাজনীতির মাঠে। অর্থাৎ জনগণের আদালতে হওয়ার সংস্কৃতি চালু করা গেলে এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কার হিসেবে বিবেচিত হবে।
জনপ্রত্যাশার বিচারে ১৯৭১ সাল, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, ১৯৯০ কিংবা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের প্রতিটি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, প্রতিটি আন্দোলনেরই চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের যে কার্যক্রম শুরু করেছে, তা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, সংস্কার কার্যক্রম এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কাজের মধ্য দিয়ে যথানিয়মে নির্বাচন কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, জনগণ নিরপেক্ষভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ পেলে জনগণের প্রিয় দল বিএনপি অবশ্যই বিজয়ী হবে। নেতাকর্মীদের মধ্যে বিজয়ের আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো। তবে অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজেদের জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবেন না।
তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সব সংস্কার কার্যক্রম জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়তে পারে।