লক্ষ্মীপুর জেলায় গত সপ্তাহের তুলনায় ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুট কমেছে। প্রতি কেজি ইলিশের দাম দুইশ থেকে তিনশ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪ শ থেকে ১৫শ টাকায়। যা গত সপ্তাহ ছিল ১৭ শ থেকে ১৮শ টাকা। দীর্ঘদিন পর জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় আবারো সরগরম হয়ে উঠছে মাছঘাটগুলো। ফলে জেলে পল্লী ও মাছঘাটে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলেরা। জালে ইলিশ ধরা পড়ায় খুশি জেলে ও আড়ৎদাররা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দবি, গত কয়েকদিনের তুলনায় সাগরের পাশাপাশি মেঘনায় ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সামনে আরো বাড়ার আশা করছেন তিনি। পাশাপাশি ইলিশের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১শ কিলোমিটার ইলিশের আভয়শ্রম। এখানে জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৫২ হাজার জেলে মেঘনায় ইলিশ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। এ মৌসুমে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথা। কিন্তু সে পরিমান মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। দীর্ঘদিন পর গত কয়েকদিন ধরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় ব্যস্ত মৎস্য পল্লীগুলো। তবে মাছের আকার ছোট। গত সপ্তাহের তুলনায় ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় কমছে দামও। এক কেজি ওজনের ইলিশের হালি বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। গত সপ্তাহ ছিল ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। অথাৎ প্রতি হালিতে কমেছে এক হাজার টাকা। একইভাবে প্রকারভেদে প্রতি হালি মাছের দাম কমেছে ২শ টাকা থেকে তিনশ টাকা। এদিকে সাগরের ইলিশে সামলাতে হচ্ছে ইলিশের চাহিদা। লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৩০টি মাছঘাটে মাছের সরবরাহ বাড়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলে ও আড়ৎদাররা। গত কয়েকদিন ধরে মাছের সরবরাহ বাড়ছে। মাছ পাওয়ায় খুশি জেলেরা। তবে সামনে মাছ আরো বাড়বে। জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে এমনটা আশা করেন তারা। গত দুইদিনে মুজচৌধুরীরহাট মাছ ঘাট থেকে প্রায় ৩শ মণ ইলিশ আমদানী রপ্তানী হয়েছে বলে জানান মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এদিকে গতকাল বুধবার সকালে মুজচৌধুরীরহাট ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়. নৌকায় করে ঘাটে মাছ নিয়ে আসছে জেলেরা। সবার চোখে-মুখে আনন্দের চিত্র। ক্রেতা-বিক্রেতার সরগমর জমে উঠছে মাছঘাট। সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঘাটে এক কেজি ওজনের এক হালি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকা। গত তিনদিন আগেও এ মাছের দাম ছিল সাড়ে আট হাজার টাকা। এর নিচে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। মতিরহাটের সফি মাঝি বলেন, নদীতে মাছ না পাওয়ায় দুইমাস ধরে নদীর পাড়ে অলস সময় পার করছি। সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তিনদিন ধরে জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ফলে ঘাটে মাছ বিক্রি করে আবারো নদীতে মাছ শিকারে নামতে হচ্ছে। এভাবে মাছ পেলে আর কোন কষ্ট থাকবেনা। ইলিশ ধরা পড়ায় খুশি। মজুচৌধুরীহাট মাছঘাটের জেলে আবুল কালাম ও মিজানুর রহমান জানান, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। এ মৌসুমে প্রচুর পরিমান ইলিশ পাওয়ার কথা। কিন্তু সে পরিমান মাছ কিছুটা কম। দীর্ঘদিন ধরে জেলেরা ইলিশ না পেলেও কয়েকদিন ধরে মাছ পাওয়ায় খুশি জেলেরা। এদিকে মাছের সরবরাহ বাড়ায় কমছে দামও। সপ্তাহের তুলনায় প্রতি হালি মাছের দাম কমেছে দুইশ থেকে তিনশ টাকা। এছাড়া প্রকারভেদে প্রতি হালি মাছের দাম একইভাবে কমছে। সামনে আরো দাম কমবে। পাশাপাশি মাছের সরবরাহ বাড়ার আশা করেন জেলেরা। এদিকে ক্রেতা মো. ইউসুফ ও আবদুর রহিম বলেন, মাছের সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমছে। সামনে আরো কমে আসবে বলে আশা করেন ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, ভারতে মাছ বিক্রি করায় তার প্রভাব পড়েছে প্রত্যেকটি ঘাটে। প্রকারভেদে এক কেজি ইলিশের হালির দাম কমছে দুইশ থেকে তিনশ টাকা। পাশাপাশি সিন্ডিকেটের কারনে ঘাটে মাছের দাম বেড়ে যায়। কোন তদারকি না থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইলিশের দাম। তাই মনিটরিং করে বাজার স্থিতিশীল করার দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, এবার অনেক বৃষ্টিপাত হয়েছে। নদীতে পানিও বাড়ছে। তবে মেঘনায় ইলিশের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। কমছে দামও। সামনে আরো বাড়ার আশা। কিন্তু সাগরে প্রচুর পরিমান ইলিশ ধরা পড়ছে। সামনে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে বলে আশা করেন মৎস্য কর্মকর্তা। এবার মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৫শ মে.টন।