দিনে প্রখর রোদ। সন্ধ্যার পর শীতভাব। এ আবহাওয়ায় পঞ্চগড়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ঠান্ডাজনিত এসব রোগ এড়িয়ে চলতে সচেতন থাকার পাশাপাশি শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় উত্তরের এই জনপদে প্রতি বছর শীতের আগমন ঘটে আগেভাগে। আর শীত বিদায়ও নেয় দেরিতে। রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির মতো ঝরে কুয়াশা। সকাল ৮টার পর ঝলমলে রোদের দেখা মেলে। দিনের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। দিনে গরম, রাতে হালকা ঠান্ডা ও ভোরে বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর এই জনপদের বেশির ভাগ মানুষই শীতের জামা পরে বের হচ্ছেন। সেই সঙ্গে রাতে ঘুমাতে হচ্ছে কাঁথা-কম্বল গায়ে জড়িয়ে। তবে এমন আবহাওয়ায় শীতের নানা রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ১০০ শয্যার এই সদর হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ২৩৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৭ জন, নারী ৯৮ জন এবং নবজাতক ও শিশু ৭০ জন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ৫২ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ঠান্ডাজনিত জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। আর নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রটিতে ভর্তি ১৭ নবজাতক সবাই একই ধরনের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে শয্যা সংকুলান না হওয়ায় শিশু, নারী ও পুরুষ রোগীদের মেঝেতে বিছানা দেওয়ার পাশাপাশি বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ৮৭৫ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলে গেছেন। এদের মধ্যে ১৮১ জন পুরুষ, ৪৩৯ জন নারী এবং ২৫৫ জন শিশু রোগী রয়েছে। পঞ্চগড় জেলা সিভিল সার্জন মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে দিনে গরম এবং রাতে হালকা ঠান্ডা থাকায় মানুষের মধ্যে সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে যত্ন নিতে হবে। যা সব সময়ই নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া এই সময়ে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার ও শাকসবজি বেশি খেতে হবে।’ তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার বেলা ৩টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১৯ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ১৯ দিন তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করেছে। ১৯ দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করেছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাশেল শাহ বলেন, ‘টানা ১৯ দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। রাতের বেলায় ঝরতে শুরু করা কুয়াশা সকাল পর্যন্ত থাকছে। তাই তাপমাত্রা কমে। এ ছাড়া দিনের বেলা রোদ উঠায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে। এতে দিন ও রাতে তাপমাত্রার ব্যবধান বাড়ছে।’