লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা না দিলেও টাকার বিনিময়ে করোনার টিকার সনদ মিলছে এ যেন বহুল আলোচিত প্রতারক সাহেদের অনুসারী। জানা গেছে, বিদেশে পাড়ি দিতে করোনা সনদ বাধ্যতামুলক। তা অবশ্যই ফাইজার ডোজ হতে হবে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী টাকার বিনিময়ে টিকা না নিলেও সনদ দেয়া হচ্ছে। কারও আবার সিনোফার্ম, সসিনোভ্যাক সনদকে ফাইজার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে মমিনুর ইসলাম বিদেশে পাড়ি দিবেন। সিনোভ্যাকের একমাত্র ডোজ নিয়েছেন গণটিকা কেন্দ্রে। অন্তত পক্ষে দুই ডোজ এবং তা ফাইজার ছাড়া বিদেশে অনুমতি নেই। ফলে বিদেশ ভ্রমনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় করোনার টিকা। অবশেষে দাড়স্থ হন আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা টিকা সুরক্ষা অ্যাপসের দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তির টেবিলে। সেখানে জানতে পারেন তিনি মাত্র একটা ডোজ নিয়েছেন সিনোভ্যাক। কিন্তু সনদে ফাইজারের দুই ডোজ লাগবে। তাই সেখানে দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার ও পরিসংখ্যানবিদন(ভার) শফিক আহমেদ সুজার কাছে যান। সনদ দিতে দরকসাকষির এক পর্যয়ে ৩ হাজার টাকা চুক্তি করে টাকা দেন মমিনুর ইসলাম। কাজ শুরু করেন দায়িত্বে থাকা শফিক আহমেদ সুজা। দ্বিতীয় ডোজ টিকা না নিলেও সনদে দ্বিতীয় ডোজ দেখানো হয়। কিন্তু সেটাও ছিল সিনোভ্যাক ডোজ। যা বিদেশে গ্রহনযোগ্য নয়। তাই বাধ্য হয়ে আবার চলে যান শফিক আহমেদ সুজার কাছে। সিনোভ্যাককে ফাইজার করতে তিনি আরও দুই হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না থাকায় বাড়িতে থাকা একমাত্র সম্বল ছাগলটি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেন। যা সুজা’র নগদ নম্বরে পাঠান। অবশেষে তার সনদে সিনোভ্যাক থেকে ফাইজার হয়ে যায়। কিন্তু ততদিনে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিদেশ যাওয়া হয়নি তার। শুধু মমিনুর ইসলামই নন, এমনই ভাবে অসংখ্য লোকের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ভুয়া করোনার সনদ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। এভাবে প্রতারনা করে আঙ্গুল ফুলে গলাগাছে পরিনত হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ শফিক আহমেদ সুজা। এসব কাজে সহায়তা করতে তার রয়েছে শক্তিশালী দালাল চক্র। কেউ এসব সমস্যায় হাসপাতালে আসলেই দরদাম করে দালালরা নিয়ে যান সুজার টেবিলে। সেখানেই জবাই হন সেবা গ্রহনকারীরা। এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। প্রশাসন যা দেখেও না দেখার ভান করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের। ভুক্তভোগি মমিনুর ইসলাম বলেন, গণটিকা কেন্দ্রে সিনোভ্যাকের মাত্র একটি ডোজ নিয়েছি। পরে বিদেশ যেতে সুজাকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সিনোভ্যাকের স্থলে ফাইজারের ৩ টি ডোজের সনদ পেয়েছি। ছাগল বিক্রি করে তাকে টাকা দিয়েও দীর্ঘ দিন কালক্ষেপন করায় বিদেশ যেতে পারিনি। এখন আগামীতে টিকা নিতেও ঝামেলায় পড়তে হবে। যেহেতু সনদে ৩ ডোজ দেখানো হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে কথা হলে পরিসংখ্যানবিদ (ভার) সুরক্ষা অ্যাপসের দায়িত্বে থাকা শফিক আহমেদ সুজা বলেন, দেশের রেমিটেন্স বাড়াতে প্রবাসীদের এমন সুবিধা দেয়া হয়। যেহেতু তারা রেমিটেন্স যোদ্ধা। দাবি করে নয়, কাজ করলে অনেকেই খুশি হয়ে কিছু টাকা দেন। আবেদন করে কেন্দ্রে পাঠালে কেন্দ্র থেকে তা পরিবর্তন করে দেয়া হয়, আমি এসব করি না। কিন্তু টিকা না নিয়ে সনদ দেয়াটা প্রতারনা কি না এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা খালিদ হোসেন বলেন, করোনা টিকা ও সুরক্ষা অ্যাপসটি পরিসংখ্যানবিদ দেখাশোনা করেন। টিকা না নিয়েও সনদ দেয়া অপরাধ। খোজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।