পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভুমি অফিসের অফিস সহকারি মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে নথি জাল করাসহ বিভিন্ন কারণে সম্প্রতি সাময়িক বহিষ্কার করেছেন জেলা প্রশাসন। কিন্তু তারপরেও ভূমি অফিসে মতিয়ারের দৌরাত্ম থামেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি সম্প্রতি নাম জারির জন্য এক কলেজ শিক্ষক তাকে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সবার সামনেই লাঞ্ছিত করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই কলেজ শিক্ষক। এ ঘটনায় তিনি সদর উপজেলার ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ থেকে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলা শহরের ইসলামবাগ এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক আহসান রেজা কাজলদিঘী এলাকায় গ্রামের বাড়িতে একটি গরুর খামার করেছেন। খামারের পরিধি আরও বাড়ানোর তগিদে একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য জমি নামজারি করার জন্য পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভূমি অফিসে যান।এ সময় ভূমি অফিসের অফিস সহকারী মতিয়ার রহমান নামজারির জন্য তাকে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। না হলে নামজারি হবে না বলেও জানিয়ে দেন। এক পর্যায়ে ওই কলেজ শিক্ষক তার ফাঁদে পা না দিয়ে নিজেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এবং সহজেই তার নামজারি হয়ে যায়। মতিয়ারের কথায় রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সে। নামজারি হয়ে গেলে ব্যাংকে কাগজপত্র জমা দেন ওই শিক্ষক। ব্যাংক থেকে কাগজপত্রের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য গত ৫ জুন তাকেসহ দুজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে প্রেরণ করে ভূমি অফিসে। সাময়িক বহিষ্কার হলেও অফিসের নামজারি শাখায় পাওয়া যায় মতিয়ারকে। ওই কলেজ শিক্ষককে দেখেই তার উপর চড়াও হয় মতিয়ার। তর্কে লিপ্ত হয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করতে থাকে তার কাছে। ওই কলেজ শিক্ষক কোন টাকা দিতে রাজি না হওয়ার মতিয়ার তার সহযোগী তছলিম ও হাসিনুরসহ ৬/৭ জনকে ডেকে তার উপর হামলা করে এবং তার পকেটে থাকা গরু কেনার ৭৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে সহকারী কমিশনার এসে তাকে রক্ষা করেন। এর মধ্যেও কয়েক দফা তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছালে তারা হুমকি ধামকি দিয়ে সটকে পড়ে। এরপর পুলিশের সহযোগিতায় ওই কলেজ শিক্ষক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেন। ১৫ জুন তিনি এসিল্যান্ড বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী আহসান রেজা বলেন, একজন অফিস সহকারী সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার পরেও নিয়মিত অফিসে যাতায়াত ও পূর্বের ন্যায় তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বিষয়টি বিস্ময়কর। সে কতটা প্রভাবশালী হলে তাকে টাকা না দেয়ায় আমার উপর ভূমি অফিসেই প্রকাশ্যে হামলা করতে পারে তা সেদিনের ঘটনা না হলে বুঝতে পারতাম না। এছাড়া তার সাজোয়া বাহিনীও আছে। যারা তার অপকর্মের শেল্টার হিসেবে কাজ করে। সাময়িক বহিষ্কারের পরও সে নিয়মিত অফিসে এসে সাধারণ মানুষকে কাজ করে দেয়ার নামে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমি চাই মতিয়ারের মতো যারা সরকারের সেবাখাতকে কলঙ্কিত করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক যেন আর কেউ এমনটি করার সাহস না পায়। সে আমার কাছে কখনোই কোন টাকা পায় না। তার কথা মতো নামজারির জন্য ১০ হাজার টাকা না দেয়াতেই সে আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এ বিষয়ে মতিয়ার রহমান বলেন, আমি ওই কলেজ শিক্ষকের সাথে জমি বায়নামা করেছিলাম। ওই বায়নামার দেড় লাখ টাকা আমি তার কাছে পাবো। ওই টাকা চাইতে গিয়ে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমি কি করেছি না করেছি আপনারা তদন্ত করে দেখেন। পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, মতিয়ারকে নথিজালের অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও চলছে। তার কক্ষটিও তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে। তার কাজ হলো প্রতিদিন এসে সাক্ষর করে চলে যাওয়া। ঘটনার দিন ওই উভয়পক্ষের মধ্যে তর্ক হয়েছে আমি পরে গিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করেছি। এছাড়া নতুন করে যে অভিযোগ দিয়েছে সেটি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।