বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অন্তঃবিভাগ ও অপারেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স হলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে জুমে নেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রলণালয়ের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক, এমপি। সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক, এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। দেশেই এখন কিডনী, লিভার, হার্ট, ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। স্বপ্নের ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টও হচ্ছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা প্রদান করা হবে। চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানদেরই সমন্বিতভাবে কাজের মাধ্যমে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এরই মধ্যে রোগী দেখা শুরু করেছেন। গতকাল বুধবার থেকে শুরু হলো অন্তঃবিভাগের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে কিছু সংখ্যক রোগীর অপারেশন হয়েছে এবং কিছু সংখ্যক রোগী ভর্তি আছেন। করোনার কারণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সময়মতো না আসায় হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে কিছু বিলম্ব হয়েছে, তবে পর্যায়ক্রমে সবকিছুই চালু হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ সফলভাবে করোনা মহামারী মোকাবিলা করেছে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বিনামূল্যে ৩৬ কোটি ডোজ ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে। করোনার টেস্টও বলতে গেলে বিনামূল্যে করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় এশিয়ায় প্রথম ও বিশ্বে ৫ম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এটা একটা বিরাট সাফল্য। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নতি ও সাফল্যের এই বিষয়গুলো প্রচার করতে হবে। ইতিবাচক সংবাদে উৎসাহ বাড়ে এবং দেশের ইমেজও বৃদ্ধি পায়। তাই দু’ একটি নেতিবচাক ঘটনাকে ফলাও করে প্রচার না করে ইতিবাচক বিষয়গুলোকে প্রচারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মাননীয় মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করার জোরালো আহ্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা অনুযায়ী সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। রোগীদের যাতে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না এবং দেশেই রোগীরা লিভার, কিডনী, হার্টের রোগ, ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, জয়েন্ট নী রিপ্লেমেন্টসহ সব ধরণের জটিল রোগের সর্বাধুনিক উন্নত চিকিৎসাসেবা পায় সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই হাসপাতালে। স্টেম সেল থেরাপি, জিন থেরাপির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রোবটিক সার্জারিও শ্রীঘ্রই চালু করা হবে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রয়েছে বিশ্বমানের এনআইসিইউ, পিআইসিইউ, আইসিইউসব ধরণের আইসিইউ ব্যবস্থা। এ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ১০০ শয্যার আইসিইউ, জরুরি বিভাগে আছে ১শ’টি শয্যা, আছে ভিভিআইপি কেবিন ৬টি, ভিআইপি কেবিন ২২টি এবং ডিলাক্স শয্যা ২৫টি। সেন্টার ভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়েছে ৮টি করে শয্যা। হাসপাতালটিতে রয়েছে নিউম্যাটিক টিউব যার মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহের পর অটোমেটিক্যালি নির্দেশিত বিভাগে চলে যায়, যা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়। মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এই হাসপাতালের শুভ উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১৪টি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যেমন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকবৃন্দ রোগী দেখা শুরু করেন। প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবলের কাছ থেকে সেবা নিয়ে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন সেবা গ্রহীতা রোগীরা। চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার রোগী সেবা নিয়েছেন। এমআরআই, সিটি স্ক্যান, বিএমডিসহ প্রায় ৪০ হাজার টেস্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন, অন্তঃবিভাগ ও অপারেশন কার্যক্রম শুরুর আজকের দিনে অবস এন্ড গাইনী বিভাগ, জেনারেল সার্জারি বিভাগ (ব্রেস্ট ও ল্যাপারোস্কপিক) এবং অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের আর্থোস্কপিক ইউনিট এর সার্জনবৃন্দ এই অপারেশন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। অবস এন্ড গাইনী বিভাগে ৫টি, ব্রেস্ট সার্জারি ২টিসহ মোট ৯ জন রোগীর সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। একজন নবজাতক জন্ম নিয়েছে, যাকে আমি সকালে দেখেছি এবং মা ও নবজাতক দু জনেই সুস্থ আছে। কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব, নিউরো ক্যাথল্যাবে হার্ট ও স্ট্রোকের রোগীদের ইন্টারভেনশন করা হয়েছে। মাননীয় উপাচার্য জানান, সাড়ে সাত শত শয্যার এই হাসপাতালের মাধ্যমে প্রতিবছর দেশের বাইরে চলে যাওয়া ২০০-৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করবে। যা স্বাস্থ্যসেবা খাতে পদ্মাসেতুর ন্যায় আর্থিক সাশ্রয় ও অর্থ আয়ে বিরাট অবদান রাখবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে নব দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে। মাননীয় উপাচার্য আরো জানান, দেশের একমাত্র সেন্টার বেইজড হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে কয়েকটি বিশেষায়িত সেন্টারের মাধ্যমে। এ গুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যাটার্নাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাস্কুলার সেন্টার, কিডনি সেন্টার, রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অপথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি সেন্টার এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার। সবগুলোই পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হবে। তিনি আরো জানান, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের জন্য রাখা হয়েছে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও মৌলিক গবেষণার জন্য আলাদা সেন্টার। মহতী এই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার মাননীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোঃ আব্দুল আজিজ, এমপি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ নুরুন্নবী সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোঃ টিটো মিঞা, ইউজিসির অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী প্রমুখসহ অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ত্রয়, কোষাধ্যক্ষ, পরিচালক দ্বয়, ডীনবৃন্দ, চেয়ারম্যান, শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্সবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।