ইউটিউব দেখে সৌদি আরবের খেজুরের বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন আব্দুল মজিদ। তিন বছর আগে তিনি সৌদি থেকে আজোয়া ও মরিয়ম জাতের খেজুরের বীজ সংগ্রহ করে নিজের জমিতে রোপণ করে বাগান তৈরি করেন। গত তিন বছরের পরিচর্যা আর অপেক্ষার পর এ বছর গাছে গাছে ধরেছে খেজুর। ফলন ভালো হওয়ায় আশা করছেন আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে গাছ থেকে খেজুর সংগ্রহ করতে পারবেন। এমন বাগান করে সফলতার সম্ভাবনা দেখছেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বিলকৃষ্ণপুর-ধোপাপাড়া গ্রামের উদ্যোক্তা আব্দুল মজিদ। আর দেশের মাটিতে সৌদি আরবের খেজুর দেখতে এবং পরামর্শ নিতে প্রতিনিয়ত বাগানে ভিড় করছেন স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। জানা গেছে, আব্দুল মজিদ ২০০০ সালে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানে ২০১১ সালে ইউটিউবে খেজুর গাছের বাগান পরিচর্যার কাজ দেখে সিদ্ধান্ত নেন দেশে ফিরে তিনিও এমন একটি খেজুর বাগান করবেন। ২০ বছর পর ২০২০ সালে দেশে ফিরে বাড়ির পাশে নিজের ৩০ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন ৬৯টি আজোয়া ও মরিয়ম জাতের খেজুর গাছ। পরিশ্রম আর ধৈর্যের পর এখন সুফল পেতে শুরু করেছেন এই উদ্যোক্তা। করোনার সময়ে বিদেশের পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে খেজুর বাগান করেন তিনি। ইউটিউব দেখে বাগান করার কলাকৌশল রপ্ত করে সৌদি আরব থেকে খেজুর গাছের তেউর (খেজুর গাছের বীজ) সংগ্রহ করে তা নিজের জমিতে রোপণ করেন। দীর্ঘ তিন বছর পরিচর্যা করার পর তার খেজুর গাছে খেজুর ধরতে শুরু করেছে। তিনি আশা করছেন আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে এই গাছগুলো থেকে তিনি পাকা খেজুর সংগ্রহ করতে পারবেন। আব্দুল মজিদ জানান, পরিকল্পনা মাফিক দেশে ফেরার আগে সৌদি থেকে আমি খেজুর গাছের বীজ সংগ্রহ করি এবং দেশের ফিরে তা রোপণ করেছি। গাছগুলোর বয়স হয়ে গেছে খেজুর ধরার। তাই গাছে গাছে খেজুর আসছে। বাগানে আজোয়া এবং মরিয়ম দুই জাতের খেজুর গাছ আছে। তিনি জানান, আজোয়া জাতের খেজুর লম্বা আর মরিয়ম জাতের খেজুর গোলাকৃতির হয়ে থাকে। তার বাগানে লাল এবং হলুদ এই দুই জাতের খেজুর আছে। আব্দুল মজিদ বলছেন, এবার প্রথম ফলন হওয়ায় একটি গাছ থেকে তিনি ৪-৫ কেজি খেজুর পাবেন। আর সামনের বছর থেকে একটি গাছ থেকে প্রায় ১২-১৪ কেজি খেজুর পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি আরও জানান, সরকারের সহযোগিতা পেলে এসব গাছের বীজ সংগ্রহ এবং তা নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে দেশব্যাপী এর বিস্তার লাভে বিশেষ ভূমিকা তিনি পালন করতে পারবেন। স্থানীয় মোস্তাক প্রামাণিক, জালাল শাহ, আব্দুল মোমিন জানান, আব্দুল মজিদের এমন সফলতা দেখে এলাকার অনেক যুবক তার এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেন, মজিদ এই বাগানের পেছনে অনেক সময়, শ্রম ও ঘাম দিয়েছেন। তার পরিশ্রমের সফলতা এখন তিনি পাচ্ছেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই খেজুরগুলো বিক্রি করার উপযোগী হবে। রমজান মাস আসলে বাজারে খেজুরের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। এলাকাবাসী আশা করছেন দেশের মাটিতে রোপণকৃত গাছ থেকে সৌদির খেজুর সংগ্রহ করে কম দামে তারা খেতে পারবেন। আর এলাকার বেকার যুবকরা মজিদের সহযোগিতায় নিজেরা এমন বাগান করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, খেজুর বাগান উদ্যোক্তা আব্দুল মজিদের দেখাদেখি অনেক কৃষক খেজুর বাগান করার কথা ভাবছেন। তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগ মজিদের সাথে কথা বলে বীজ সংগ্রহ করে তার থেকে সাকার উৎপাদন করা হবে। তাহলে প্রকৃত আজোয়া এবং মরিয়ম খেজুরের চারা পাওয়া সম্ভব হবে। এ বছর উদ্যোক্তা মজিদের সফলতা দেখে সামনে দিন থেকে তার বাগান থেকে সাকার চারা সংগ্রহ করে কৃষক পর্যায়ে তা বিতরণ করা হবে।