নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খানকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা মামলার সঙ্গে জড়িত এবং অস্ত্র মামলার আসামি আসাদুজ্জামান আসাদের ছবি সম্বলিত একটি পোস্টার লাগানো হয়েছে সমগ্র জেলাজুড়ে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছবিযুক্ত পোস্টারটিতে বড় আকারে অভিযুক্ত আসাদের ছবি ছাঁপানোসহ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। আর এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামীলীগসহ সমগ্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলীর ছবি হয়েছে পোস্টারটির উপরিভাগে। আর নিচের অংশে রয়েছে গুলি করে হত্যা চেষ্টা মামলার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত আসাদের ছবি। তবে বিষয়টি নিয়ে বিব্রতবোধ করছেন বলে জানিয়েছেন তারা। উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খান জানান, আমাকে যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে সেই অস্ত্রসহ ফরহাদ ও আরিফকে আটক করে ঢাকা’র ডিবি পুলিশ। আসাদ তাদের অস্ত্র সরবরাহ এবং সহায়তা করছে বলে পুলিশের কাছে তা স্বীকার করেছে তারা। পরে মতিঝিল জোনের ডিবি পুলিশের এসআই খান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ফরহাদকে ১, আরিফকে ২ ও আসাদকে ৩ নম্বর আসামি করে একটি মামলা করেন। আসাদকে আমরা মামলায় না জড়ালেও এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে কীভাবে পোস্টারিং করে আসাদ? পোস্টারটির উপরের অংশে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনসহ স্থানীয় এমপি জহিরুল হক ভূইয়া মোহনের ছবিও রয়েছে। আসামি হওয়ার পর প্রথম ঢাকার একটি ৫ তাঁরকা হোটেলে প্রকাশ্যে এই এমপি’র সঙ্গে ছবি তুলে আসাদ। শিবপুর আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান একজন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জীবনে এমন হৃদয়-বিদারক ও মর্মান্তিক হত্যা চেষ্টা ঘটনা এবং মামলার সঙ্গে জড়িত আসামী ও বিতর্কিত ব্যক্তির ছবি সম্বলিত পোস্টারটি স্থানীয় এমপি’র পরামর্শেই লাগানো হয়েছে বলে হারুন খান সমর্থকদের অভিযোগ। এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যা প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে জেলাব্যাপী যখন অভিযুক্ত আসাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে। এমনই সময়ে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিতর্কিত একটি পোস্টার লাগিয়েছে আসাদ ও তার সমর্থিতরা। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মহসিন নাজির ও সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঞা রাখিল। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলীর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, অনুমতি ছাড়া আমাদের ছবিসহ পোস্টার আর যাতে না লাগায় এবং যেসব পোস্টার লাগিয়েছে তা তুলে ফেলার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নরসিংদী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, এই পোস্টারে আমার ছবি থাকলেও আমি এর কিছুই জানি না। তবে ভবিষ্যতে যেন অন্য যে কেউ এমন কাজ না করতে পারে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পোস্টারের বিষয়ে জানতে অস্ত্র মামলার আসামি ও শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুর বাজার সড়কের থানা সংলগ্ন নিজ বাসভবনে প্রবেশ করে উপজেলা চেয়ারম্যানকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় স্থানীয় এমপি ও তার ভাইয়ের মদদ রয়েছে বলেও বারবার অভিযোগ করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তারপরও ঘটনার রহস্য উন্মোচন না করে মামলা ভিন্ন দিকে ঘোরাতে এমপির রাজনৈতিক কার্যালয় পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। এ ঘটনায় তড়িঘড়ি করে সেলিম নামে এক ব্যক্তিকে বাদী বানিয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতাকর্মীদের আরিফুল ইসলাম মৃধা ও খোরশেদ হাজিকে আসামি করে শিবপুর থানায় একটি মামলা হয়। পরে পুলিশ রাতারাতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করলেও বাদী বলেন, এই মামলা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।