১২ ডিসেম্বর নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকবাহিনী। সেদিনের নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা মনে করে এখনো ভয়ে আঁতকে উঠে নরসিংদী জেলা বাসী। ১৯৭১ সালের এই দিনে (১২ ডিসেম্বর) সম্মিলিত মুক্তি বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাকবাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নরসিংদী শহরসহ গোটা জেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ দিনটি নরসিংদীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিন। প্রতি বছরই দিবসটিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। কিন্তু যারা দেশের জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর তাদের গণকবরগুলো রয়েছে অযত্ন আর অবহেলায়। কোথাও কোথাও রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হলেও দুই একটি ছাড়া থমকে আছে সেই পর্যন্তই। দৃশ্যমান কোনও উন্নয়ন হয়নি এসব স্মৃতি রক্ষায়।৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খন্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়।জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের তালিকায় ওই খন্ড যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে শহীদ হয়েছিলেন ২৮৪ জন থাকলেও জেলা প্রশাসনের শহীদ ব্যাধিতে ১১৬ জন বীর সন্তানের নাম রয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদী সদরে ২৭ জন, মনোহরদীতে ১২ জন, পলাশে ১১, শিবপুরের ১৩, রায়পুরায় ৩৭ ও বেলাব উপজেলার ১৬ জন। এছাড়া বহু মা-বোনের নীরব আত্মত্যাগের বিনিময়ে নরসিংদী হানাদার মুক্ত হয়।১৯৭১ এ পাক বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা মনে করে এখনো ভয়ে আঁতকে উঠেন নরসিংদীবাসী। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষী অনেক গণকবর রয়েছে জেলাজুড়ে। স্বাধীনতার ৫১ বছর অতিবাহিত হলেও চরম অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে গণকবরগুলো। সংরক্ষণ না করায় অরক্ষিত এসব গণকবরের শেষ চিহৃটুকু মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদীর এমন কোনও স্থান নেই যেখানে ৭১-এ শক্র সেনাদের নিষ্ঠুর ছোবল পড়েনি। ১৯৭১ সালে নরসিংদী জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক বাহিনীর সদস্যরা।৭১ এ বর্তমান জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৭ থেকে ২৮ জনকে ধরে নিয়ে পাকসেনাদের ক্যাম্প নরসিংদীর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে আটক রাখা হতো। নির্যাতন শেষে তাদের নিয়ে যাওয়া হতো বর্তমান ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাঁচদোনা মোড় সংলগ্ন তৎকালীন লোহাপুল এর নীচে। সেখানে ৪ থেকে ৫ জনকে বসিয়ে রেখে তাদের সামনে ২০ থেকে ২২ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী। হত্যা শেষে লোহারপুলের নীচে সকলকে একসঙ্গে মাটি চাপা দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী জেলা ছিল ২নং সেক্টরের অধীনে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তৎকালীন মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ। নরসিংদীকে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে নেয়া হলে কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন মো. নূরুজ্জামান। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াবহ কালো রাতের পর ৪ এপ্রিল পাকিস্তানীদের বিমান হামলায় নরসিংদী শহর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। এ হামলায় শহীদ হন আব্দুল হক, নারায়ণ চন্দ্র সাহা, চাঁদ মোহন দাস, জগদীস দাস, নির্মল দাস সহ নাম না জানা আরও ৮ জন।এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নরসিংদীর পাঁচদোনা ব্রিজে বিভিন্ন যানবাহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে পাক সেনা ও তাদের দোসর রাজাকাররা নিরীহ মানুষদেরকে হত্যা করে ব্রিজের নিকট গণকবর দিয়েছিল। সশস্ত্র যুদ্ধে জেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত নারী পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে গণকবর দিয়েছিল পাকবাহিনী। গণকবরগুলোর বেশিরভাগই চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার এসব চিহ্নিত স্থানগুলো সংরক্ষণ করবে বলে আমরা আশাবাদী। নরসিংদী জেলা ৭১ সেক্টর কমান্ডার মোতালিব পাঠান জানায় এ জেলায় ৫ হাজার ৮৪ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ২৮৪ জন শহীদ হন। সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে পূর্বে না থাকায় জেলা প্রশাসনের শহীদ ব্যাধিতে ১৩৬ জন শহীদদের নাম স্থান পেয়েছে বাদ পরা শহীদদের নামের তালিকা শহীদ ব্যাধিতে অন্তর ভ’ক্ত করার জন্য বহুবার তাগিদ দিলে তা কাজে আসছেনা, বাদ পরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম জেলা প্রশাসনের শহীদ ব্যাধিতে অন্তর ভুক্তির দাবী জানান তিনি। নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড.বদিউল আলম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। মহান মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদীর বধ্যভূমিগুলো অযত্নে অবহেলায় থাকবে না। বর্তমান সরকার এসব সংরক্ষণে খুবই আন্তরিক। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক নির্মাণ ও বিভিন্ন গণকবরগুলোর সংস্কার কাজ চলছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে পালন করা হবে নরসিংদী মুক্ত দিবস আর এ দিবসে দেশসেরা ব্যান্ড ও একক শিল্পীদের নিয়ে বিজয় কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়েছে।