নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় ছেলে ছাগল চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তাঁর বাবা আঙ্গুর মিয়াকে (৫০) বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ১৬ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে এবং ১ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।বুধবার(২৯ মার্চ) আঙ্গুর মিয়ার পরিবারের লোকজন উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদ বিপ্লবের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন।গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আঙ্গুর মিয়াকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়। পরে রাত ২টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্যের হস্তক্ষেপে মুচলেকা আদায় করে আঙ্গুর মিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী আঙ্গুর মিয়া উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়নের কটিয়াদি এলাকার আওয়াল নবীর ছেলে। পরে তিনি মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।ভুক্তভোগী আঙ্গুর মিয়ার পরিবারের সদস্যরা বলেন, আঙ্গুর মিয়ার ছেলে সাদেকুল ইসলাম (১৯) নাকি পাশের এলাকা থেকে ছাগল চুরি করেছেন, এমন অভিযোগে গতকাল সকাল ৮টার দিকে তাঁর খোঁজে বাড়িতে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদের লোকেরা। এ সময় বাড়ির সব জায়গায় তাঁকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের দ্রুত খুঁজে বের করে দিতে বলে চলে যান তাঁরা। পরে সকাল ১০টার দিকে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে আবার বাড়িতে আসেন চেয়ারম্যানের ১০-১২ জন কর্মী-সমর্থক। ওই সময় সাদেকুলকে না পেয়ে তাঁর বাবা আঙ্গুর মিয়া ও মা রিমা আক্তারকে টেনেহিঁচড়ে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যান। ইউপি কার্যালয়ে নেওয়ার পর রিমা আক্তারকে ছেড়ে দিয়ে আঙ্গুর মিয়াকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ১৬ ঘণ্টা আটকে রাখার পর রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্যের হস্তক্ষেপে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে ফেরার পর আঙ্গুর মিয়া অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।ভুক্তভোগী আঙ্গুর মিয়ার স্ত্রী রিমা আক্তার বলেন,রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তারা আমার অনুরোধ রাখেনি। উল্টো চেয়ারম্যান স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে আমার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। এই রোজা-রমজানের দিনে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধরের চিহ্ন আছে। তাঁকে কোনো ধরনের চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি।রিমা আক্তার আরও বলেন,আমার ছেলে যদি ছাগল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তার বিচার হোক। কিন্তু আমার নিরপরাধ স্বামীকে এভাবে বাড়ি থেকে তুলে এনে ১৬ ঘণ্টা ধরে আটকে রেখে নির্যাতন করতে পারেন না চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদ বিপ্লবের বিচার চাই।অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদ বলেন,আঙ্গুর মিয়ার ছেলে সাদেকুল এর আগে ওই এলাকা থেকে প্রায় ১০০ গরু-ছাগল চুরি করেছে। তার ছাগল চুরির সহযোগী মাহমুদুল হাসান নামের একজনকে আটকের পরই এই তথ্য জানতে পেরেছি আমরা।তবে ১৬ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন,আঙ্গুরের ছেলেকে বাড়িতে না পেয়ে তাকে সন্ধ্যার দিকে আমার লোকজন ধরে এনেছিল। পরে ভোরের দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদ আরও বলেন,ছেলেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করায় বাবাকে আটক করা হয়েছিল। তাকে মারধর করা হয়নি এবং টাকাও দাবি করা হয়নি। পরিবারের এসব দাবি ভিত্তিহীন। স্থানীয় ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া বলেন,চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। আমি জিম্মা হয়ে আঙ্গুর মিয়াকে ছাড়িয়ে এনেছি। এরপর তাঁকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি আমি। তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে সকালে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।আঙ্গুর মিয়ার মেয়ে ময়না আক্তার বলেন,কিছুদিন আগে পাশের এলাকায় একটি ছাগল হারিয়ে যায়। আমার ভাই সাদেকুলকে নাকি সেখানে দেখা গিয়েছিল। তাই তাদের সন্দেহ, সাদেকুলই ওই ছাগল ছুরি করেছে। এই সন্দেহ থেকেই তাকে ধরে নিতে চেয়ারম্যান আমাদের বাড়িতে লোক পাঠায়। গত ইউপি নির্বাচনে আমার বাবা চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদ বিপ্লবের পক্ষে কাজ করেননি। এ নিয়েও চেয়ারম্যান বাবার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ ছাড়া জমি নিয়ে বাবাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। যাঁরা বাবাকে বাড়ি থেকে তুলে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে মামুন, সাদ্দাম ও নাজমুল নামের কয়েকজনকে চিনতে পেরেছি আমি। তাঁরা সবাই চেয়ারম্যানের কর্মী।মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, খিদিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কল করে ছাগল চুরির অভিযোগে আটকের খবর জানিয়েছিলেন। তবে অভিযুক্ত ছেলেকে না পেয়ে তাঁর বাবাকে আটক করার কথা ওই সময় তিনি জানাননি। স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমেই বিষয়টি জানতে পেরেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।