যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ -এর নামফলক উম্মোচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনৈতিকরা কেউই দাওয়াত পাননি। রবিবার (২৬ মার্চ) বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামে একটি রাস্তার নামফলক উম্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষসহ শত শত প্রবাসীরা যোগদান করলেও দেখা যায়নি কোন নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি’র কোন কূটনৈতিককে। এ নিয়ে প্রবাসীদের মাঝে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনৈতিকদের কেন দাওয়াত করা হয়নি এমন এক প্রশ্নের জবাবে জ্যাকসন হাইটসের রাস্তা ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামে নামকরণ প্রস্তাবের দাবিদার জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (জেবিবিএ)এর কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব সিটি কর্তৃপক্ষের। এখানে আমাদের কিছুই করণীয় ছিল না, অনুষ্ঠানের সম্পুর্ণ বন্দোবস্ত করেছেন সংস্লিষ্ট কাউন্সিলম্যানরা। এটা তাদের দায়িত্ব কাকে আমন্ত্রণ জানাবেন। তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল বলে তারা মনে করছেন। নিউ ইয়র্ক সিটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথভাবে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় তারা উক্ত ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামে একটি রাস্তার নামফলক উম্মোচন অনুষ্ঠানে তারা যাননি বলে সচেতন প্রবাসীদের অনেকেই মনে করছেন।
ওয়াশিটন ডিসি’র বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সাথে কয়ক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি, তবে একটি তার দপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে তারা নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের কোন আমন্ত্রণ পাননি, এমনকি বাংলাদেশি কমিউনিটির কোন নেতৃবৃন্দরাও এ তাদেরকে জানাননি।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিতের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তার দপ্তরের জনৈক কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। পরে প্রেস সেক্রেটারি নাসিরকে ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
নিউ ইয়র্কের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ কিংবা বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের পক্ষ কোন আমন্ত্রণ পাননি তিনি। ফলে তিনি উক্ত অনুষ্ঠানে যাননি।
প্রায় দুইমাস ধরে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নামফলক উম্মোচনের দিনক্ষণ ঘোষনা দেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের কেন আমন্ত্রন দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চলছে নানা গুঞ্জন। এর জন্য কারা দায়ী? বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দ নাকি নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কমিউনিটিতে চলছে মুখরোচক আলোচনা।
গত রবিবার দুপুর ২টায় বাংলাদেশ স্ট্রিটের নামফলক উম্মোচন করেন জ্যাকসন হাইটস ও এলমহার্স্ট এলাকার নব নির্বাচিত সিটি কাউন্সিলম্যান উপমহাদেশীয় বংশোদ্ভুদ শেখর কৃষ্ণান। জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (জেবিবিএ)এর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। যথাযথ আমন্ত্রণ না পাওয়ায় নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ দূতাবাসের কোন সরকারি কর্মকর্তাগণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
জ্যাকসন হাইটসের একটি রাস্তা ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামে নামকরণের জন্য প্রায় এক বছর ধরে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (জেবিবিএ) সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা নানাভাবে নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগসহ সামাজিক তৎপরতা চালিয়ে আসছেন কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের কাউকেই কোন রকম বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় প্রবাসীদের মাঝে নানা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয় সেখানে উপস্থিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত থাকলেও তাদেরকেও দু’টি কথা বলার সুযোগ দেননি আয়োজকবৃন্দ। এ ঘটনায় নিউ ইয়র্ক প্রবাসীরা হতবাক হয়েছেন। এমনকি জ্যাকসন হাইটসে বসবাস করেন না শ্রমিক সংগঠনের সাথে জড়িত এমন একজন ব্যক্তিকে দিয়ে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করা হয়। যা উপস্থিত প্রবাসীদের মাঝে নানা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ স্ট্রিটের নামফলক উম্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং, অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যাটালিনা ক্রুজ, স্টিভেন রাঘাব, কাউন্সিল মেম্বার জেসিকা গঞ্জালেজ-রোজাস, অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা, কাউন্সিল মেম্বার লিন্ডা লি, জেবিবিএ’র বর্তমান সভাপতি হারুন ভুঁইয়া ও সাধারন সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান, অপর জেবিবিএ’র সভাপতি গিয়াস আহমেদ, সাধারন সম্পাদক তারেক হাসান খানসহ শত শত বাংলাদেশি উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।